ঋষভ চক্রবর্তী | কালস্রোত | গুচ্ছকবিতা ৯
(১)
উল্কাপিণ্ডের মতো ধেয়ে আসে কালস্রোত
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাচীন সভ্যতার
ধ্বংসস্তূপে পা বাড়াই―
অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকি অবিরত
যদি কেউ এসে হাত বাড়ায়?
তারপর নিজেই উঠে দাঁড়াই
আবারও পথ ভুল করি
ভুল পথই হয়তো আমাদের বেছে নেয়
স্পর্শ করি কালের গতিপথ
লুটিয়ে দেই নিজেদের সমস্ত আশ্রয়
সত্যি আমরা কাউকে ছেড়ে যাই না
কুন্তীর মতোই কালস্রোতে কর্ণকে ভাসাই।
(২)
সমস্ত খড়কুটো একসময় মিলিয়ে যায়
আবেগের সমুদ্রে জোয়ার আসে।
প্রাসাদের মোহ আজ লুটিয়েছে সমুদ্রে
সর্বশান্ত হয়েছে একটা যুগ―
শুধু দৈব আদেশে আমরা চুপ থাকি
খুঁড়ে খুঁড়ে নিজেদের দোষগুলো চাপা দেই
বিস্ময় বিস্ময় বিস্ময়
নিজের প্রতি বিস্ময়
আমরা শুধু ভাঙতেই জানি
নিজেদের ক্ষমতায় নিজেরাই আহত হই
ক্ষত জুড়ে আগাছা জন্মায়
তখন শুধু আহত শরীর নিয়ে
কালস্রোতে কৃষ্ণের দ্বারকায় লীন হতে চাই।
(৩)
'সময়কে জয় করা যায় না'
জয়ী হতে চাই না
সময়ের কাছে আমরা ঋণী
কষ্টের মেঘ জমে জমে হঠাৎ একদিন
পরিশ্রান্ত হৃদয় জুড়ে― অনন্তবর্ষণ হয়।
বিদায় জানাতে কেউ আদৌ চায়?
শুধু কালস্রোতে হেটে চলি শত মাইল
আগুনে পুড়ে সোনা হতে চাওয়ার মোহ
একদিন নাগরিক ক্লান্তিতে মিশে যায়
অচেনা হয়ে ওঠে সময়
আমরাও দিন শেষে সবাই―
অভিমন্যুর মতোই চক্রব্যূহে নিহত হই।
(৪)
কালস্রোত সভ্যতাকে অনেক দূর নিয়ে এসেছে
এখন এগিয়ে যেতে মন চায় না।
শুধু লুটিয়ে দিতে চাই সমস্ত ক্রোধ,
অহং ধুয়ে একটু নত হতে চাই―
পথ জুড়ে ছায়াবৃক্ষ থাকবে না
মাভৈ! কালস্রোতে সবাই বহমান
কেউ তলিয়ে যায়, কেউ ভেসে ওঠে;
দিগ্বিদিক অগণিত জলরাশি
শেষ নেই কোনও―
তবুও তো লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলি
যুগান্তরের ঢেউ সামলে সাম্পান হয়ে উঠি!
Comments
Post a Comment