তমোহন উত্তরবঙ্গের অন্যতম ভারত সরকারের পি.আর.জি.আই কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বার্ষিক গবেষণামূলক মুদ্রিত পত্রিকা। পাশাপাশি লেখক-পাঠকদের অনুরোধে অনলাইন ডিজিটাল ওয়েবপত্র হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ। সারাবছর জুড়ে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্ত থেকে তমোহনে লিখতে ও পড়তে পারবেন; পাশাপাশি দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে তমোহন ক্রয় করতে পারবেন। আপডেট পেতে আমাদের সাথে সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটে যুক্ত থাকুন। প্রকাশিত সংখ্যার বিবরণ : ১. (২০২৩-২৪) : তমোহন, ময়নাগুড়ির ইতিহাস, প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, নভেম্বর ২০২৩, ২. (২০২৪-২৫) : তমোহন, সাহিত্য ও ইতিহাসের পাতায় উত্তরবঙ্গ, দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২৫

ফিরে পাওয়া জীবনে: নতুন এডভেঞ্চারের খোঁজে | বাবলু সাহা | ধারাবাহিক | পর্ব ১

 


এই ধারাবাহিক লেখার শুরুতে ছোট্ট করে একটি প্রাক মুখবন্ধ রাখলাম। যাতে প্রেক্ষিতটা বুঝতে সুধী পাঠকের কাছে পরিষ্কার হয়। আমার এডভেঞ্চার মূলক ভ্রমণ বা কঠিন দুরূহ অচেনা অজানা পাহাড়ী পথে তখন আমি একের পর এক বাধা লঙ্ঘন করে সফলভাবে এগিয়ে চলেছি, ঠিক সেই সময়ে (৯০ -এর দশক) আমার জীবনে নেমে এলো ঘোর অন্ধকার। প্রবল মানসিক অত্যাচার আর শারীরিক কঠিনতম অসুখের কারণে আমি পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে কলকাতার নামী দামী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মৃত্যুর খুবই কাছে।


যাই হোক, বিখ্যাত মানবিক ডাক্তারবাবুদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর সহায়তায়, দীর্ঘ চিকিৎসা এবং অনেকগুলি বড় অপরেশন করার পর আমি অনেকটাই সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরি। মূলত (দু-চারজন) গুটিকতক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাড়া নিজের বলতে কেউই পাশে ছিলনা। ১০-১৫ বছর আমার জীবন থেকে 'নেই' হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় নিউ আলিপুর স্টেশন দুর্গাপুর ব্রীজ সংলগ্ন 'বি. পি. পোদ্দার' হাসপাতালের নির্দিষ্ট একটি বেড ছিল আমার একমাত্র বাড়ি; নির্দিষ্ট এই কারণেই বললাম, কারণ একেবারে জানলার ধারের সেই বেড থেকে শুয়ে শুয়েই অনেক রাত থেকে ভোর অবধি লম্বা সর্পিল মালগাড়ির আনাগোনা লাইন ধরে ঘর্ষণ এবং তীব্র শব্দে চলতেই থাকতো।

    আমার কাছে তখন বাইরের জগৎ, পাহাড়, জঙ্গল সব মুছে গেছে, আমার মনের ভিতর পৃথিবী বলতে জেগে ছিল শুধু সেই মালগড়ির প্রতীকী আনাগোনা। তারমধ্যে দিয়েই আমি নিজের আশা আকাঙ্ক্ষাকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম। আর আজ? সব বাধা কাটিয়ে আবার নতুন করে আমার পথ চলার শুরু। অতএব ঘরে বন্দী হয়ে আছি বলে, মনোবেদনা অথবা হতাশার কোনও রকম কারণ নেই। জীবন এতো শীঘ্রই সহজে শেষ হয়ে যায়না।


শুরু করা যাক এবার : পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠে যখন আমি আবার আগের মতোই স্বাভাবিক কাজকর্ম হাঁটাচলা করতে সক্ষম, তখন এতো বছর ঘুমিয়ে থাকা আগের সুপ্ত বাসনাগুলো আবার মনের ভিতরে ধীরে ধীরে জেগে উঠতে শুরু করলো। মনস্থির করলাম, আবার শুরু করব হিমালয়ের গভীরে নতুন করে পথ চলা অর্থাৎ চলতি ভাষায় ট্রেকিং। একেবারে প্রথমদিকে যেদিন প্রথম পায়ে হেঁটে হিমালয়ের বুকে চলা শুরু করি, তখন আমার গন্তব্য ছিল তুলনামূলক সহজ এবং প্রচলিত পথ।

    এভাবে বেশ কয়েকবার যেতে যেতে, আমি আমার গন্তব্যস্থলের দুরত্ব ক্রমে বাড়াতে থাকি। স্বাভাবিকভাবে চলার পথও ক্রমশ কঠিন হতে থাকে এবং অপ্রচলিত কিছু নতুন পথের সন্ধানে থাকি, যে পথে প্রচলিত ট্রেকার্সদের আনাগোনা  তুলনায় অনেক কম। যাই হোক, সেবারে ঠিক করি, কলকাতা থেকে এন. জে . পি. হয়ে প্রথমে যাব আমার বহু পূর্ব পরিচিত জায়গা দার্জিলিং জেলার ঘুম হয়ে মানেভঞ্জনে। এই মানেভঞ্জন হচ্ছে, অগণিত নতুন শুরু করা ট্রেকারদের, পশ্চিমবঙ্গের সবচাইতে উচ্চতম স্থান সান্দাকফু পৌঁছবার প্রবেশদ্বার। এখান থেকেই পায়ে হাঁটার শুরু।


কিন্ত, আমার গন্তব্য তো এখান থেকে সুখিয়াপোখরি হয়ে, পশুপতি মার্কেট বর্ডার পার করে, পূর্ব নেপালের ইলাম (জেলা) বাজার। সেইমত দিন ঠিক করে ২০১১ সালের এক এপ্রিল মাসে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র স্যাকে ভরে শিয়ালদা থেকে রাতের পদাতিক এক্সপ্রেস এর একটি জেনারেল কামরায় চড়ে বসলাম। প্রসঙ্গত বলে রাখি, পূর্ব নেপালের এই রুট তখনও অবধি খুব বেশি জনপ্রিয় হয়নি, এবং অনেকের চেনার বাইরেই ছিল। অতএব এই রুট সম্বন্ধে বিস্তারিত পূর্ণাঙ্গ তথ্য বলতে সেরকম কিছু ছিলনা। গুগল ঘেঁটে এবং কিছু ছবি  দেখে পথের একটা আন্দাজ করে নিয়েছিলাম।

    পরেরদিন সকাল ৯ -টা নাগাদ ট্রেন গিয়ে পৌঁছল এনজেপি স্টেশনে। সেখান থেকে অটো ধরে তেনজিং নোরগে বাস স্ট্যান্ডের দুতলায় ফ্রেশ হয়ে, নীচে নেমে সোজা দার্জিলিং এর শেয়ার জীপে চড়ে বসলাম। আমি নামবো ঘুম স্টেশনে। অবশেষে এসে পৌঁছলাম ঘুম স্টেশনে। সেখান থেকে সোজা যাবো মানেভঞ্জন। কিন্তু গাড়ির খোঁজ নিয়ে দেখিশেষ শেয়ার জিপ আধঘন্টা আগেই ছেড়ে চলে গেছে। অগত্যা একটি প্রাইভেট মারুতি ভ্যান বুক করে চললাম জোড়পোখরীর উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে আবার শেয়ার ভ্যানে যেতে যেতে আমার বিকেল হয়ে গেল। 

Comments

Popular Posts

Tamohan, Govt. of India Registration Number (PRGI) WBBEN/25/A1160, New Genaration Acclaimed Bengali Literary Research Journal (Language, Literature & Cultural Studies) & Independent Publication. Maynaguri, Jalpaiguri, West Bengal, India. Estd. 2023.