তমোহন উত্তরবঙ্গের অন্যতম ভারত সরকারের পি.আর.জি.আই কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বার্ষিক গবেষণামূলক মুদ্রিত পত্রিকা। পাশাপাশি লেখক-পাঠকদের অনুরোধে অনলাইন ডিজিটাল ওয়েবপত্র হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ। সারাবছর জুড়ে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্ত থেকে তমোহনে লিখতে ও পড়তে পারবেন; পাশাপাশি দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে তমোহন ক্রয় করতে পারবেন। আপডেট পেতে আমাদের সাথে সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটে যুক্ত থাকুন। প্রকাশিত সংখ্যার বিবরণ : ১. (২০২৩-২৪) : তমোহন, ময়নাগুড়ির ইতিহাস, প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, নভেম্বর ২০২৩, ২. (২০২৪-২৫) : তমোহন, সাহিত্য ও ইতিহাসের পাতায় উত্তরবঙ্গ, দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২৫

বনেদিয়ানা ও উদযাপন | অণুশ্রী তরফদার | মুক্তগদ্য ৪

কাঁসা পেতলের বাসনে তেঁতুল মাখিয়ে রাখা, এরপরে মেজোমা, মা আর মিনতী মাসীর যুদ্ধ। তামা আর ললিত বারকোশ পিসিমার ভাগেই বরাবর। যতদিন তাঁদের শরীর অবসর গ্রহন না করছে ততদিন এই চিত্র বদলাবার নয়, তবে কৃষ্টি ধরে রাখাটাও পরিস্থিতি সাপেক্ষে । একটা কাশ কাশ রোদ্দুর উঠোন থেকে দালানে মিচকি হাসিতে ভেংচি কাটছে, ফি বছরেই এক ছবি। শিউলিটা বেশ গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে, টগবগে যৌবন উছলে পড়ছে, বয়স তো হলো― গাছের আর ছোটকিরও। একজন ফুটেই আছে যুবতীর লাবণ্য সম্ভারে, আর একজন শাখাময় কুঁড়ি নিয়ে সম্পূর্ণ গিন্নী। স্থল ও জল কমলের নিজের মতো করে প্রস্তুতি চলছে সময়মতো রূপ বিস্তারের। বেলের নীচের দিকের ডাল ছেঁটে পেলব! বড্ড কাঁটা! ঠাকুরদা ঠাকুরমা দালানে বসা, লিস্টি মিলিয়ে দায়িত্ব বন্টনে ব্যস্ত। ঝাড়পোছ চলছে বাড়িময়, তিনটি জন লেগেছে, হাঁকডাক রোকো রাখো, সাবধানে! বাঁশ- ঝাড় হতে উঠোনের কোণে এসে বিশ্রাম নিচ্ছে। কাল খোঁড়াখুঁড়ি শুরু! নিতাই ডেকোরেটর ঠ্যালাগাড়ি থেকে বোঁচকা নামিয়ে রাখাচ্ছে। পিসিঠাম্মি বারান্দার এক কোনে মাদুরে বসে সুপারী জাঁতি নিয়ে কসরতে ব্যস্ত । পাড়া প্রতিবেশী, আশুজন-বসুজন আসবে,চা ও পানের ব্যবস্থা তো রাখতেই হবে। ওদিকে কলাগাছ সাফসুতরো, পরিণত শরীরকে বিলোতে। নারকেল ও ছোবা যথাস্থানে, বিনম্র আয়োজনে। নাড়ু, মোয়া, মুড়কি, তিলনাড়ু হাঁড়িতে প্রবেশ করার অপক্ষায় দুই ওস্তাদের হাত দিয়ে। গনগনে লাল শিখা, উনুন কাঠপোড়া ধোঁয়া, আর! লোহার কড়াতে খইয়ের ফুল । পেতলের খাপড়িতে দুধ জ্বাল হচ্ছে ক্ষীরের মিষ্টান্ন তৈরি হবে।

আরেক দিকে কচিকাঁচা এমনকি সব বিভাগের সদস্যদের মধ্যেই ফিসফাস, এখনও বাকি! বিস্ময়! চোখে চোখে কথা,ইশারা! প্রায় শেষ লগ্ন উপস্থিত, এখনো সিগন্যাল আসছেনা! বেলা গড়াতেই পাওনার থলে মায়ের হাতে সমর্পিত, ঠাকুরদা - ঠাকুরমার স্নেহমাখা কণ্ঠ- 'দেখো বড়বৌমা, সবার জন্য ঠিকঠাক যেন কেনাকাটা হয়। বাড়িতে ওরাও কিন্ত সেই কবে থেকে আমাদের সাহায্য করে আসছে, ওদেরটাও পছন্দ করে ভালো জিনিস নেবে'। পুরোনো বাজার কিংবা সদরের  ঝকঝকে মলে বছরের খরিদারি তিন থেকে তিরাশির। উৎসব! আনন্দ! প্রত্যাশা! নীরবে গৃহমাথাদের স্নেহঘটি উপুড় হয় চারা ও কিশলয়ে, গুল্মও বঞ্চিত হয়না কখনও বৃক্ষছায়ায়। কাল বাদে পরশু শরৎ অতিথিদের আনাগোনা শুরু হবে, যদিও! ভাঁড়ার ঘর ইদানীং কম কথা বলে, রমরমা বাড়ন্ত! মেজাজের জোয়ারে স্ত্রীধন নিলামে উঠেছে । ইতি টানতে সম্মানের কালবৈশাখী আশ্বিনের আলোকে ম্লান করে যদি!! কুলের মান কূল ছাপিয়ে আছড়ে পড়ে, পাড় ভাঙে, নোনা ধরা মহলের বালি ঝাড়ুর ধাক্কায় জমে স্তুপ হয়। হইচই, শামিয়ানা, আলো, রোশনাই, ঢাক-কাঁসরের সমতালে সরগরম। দুইদিন আগে থেকে পরের দুইদিন কলাপাতা কাটতে কাটতে নকুলের হাতে কালচে ছোপ। কম পাত তো পড়ছেনা! সৌম্যর ডায়েরির পাতা ভরতে থাকে পর্যবেক্ষণ আর অভিজ্ঞতার আটপৌরে সাজে। শরৎ আসে শরৎ যায়, উৎসবের পরে বনেদিয়ানা পিদিম জ্বালে শূন্য দালানে আর সয়ে নেয়া অনটনে। কথারা ছবি হয়, আধজাগা রাতে,স্বপ্নে গল্পে ও উদযাপনে।

Comments

Popular Posts

Tamohan, Govt. of India Registration Number (PRGI) WBBEN/25/A1160, New Genaration Acclaimed Bengali Literary Research Journal (Language, Literature & Cultural Studies) & Independent Publication. Maynaguri, Jalpaiguri, West Bengal, India. Estd. 2023.