তমোহন উত্তরবঙ্গের অন্যতম ভারত সরকারের পি.আর.জি.আই কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বার্ষিক গবেষণামূলক মুদ্রিত পত্রিকা। পাশাপাশি লেখক-পাঠকদের অনুরোধে অনলাইন ডিজিটাল ওয়েবপত্র হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ। সারাবছর জুড়ে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্ত থেকে তমোহনে লিখতে ও পড়তে পারবেন; পাশাপাশি দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে তমোহন ক্রয় করতে পারবেন। আপডেট পেতে আমাদের সাথে সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটে যুক্ত থাকুন। প্রকাশিত সংখ্যার বিবরণ : ১. (২০২৩-২৪) : তমোহন, ময়নাগুড়ির ইতিহাস, প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, নভেম্বর ২০২৩, ২. (২০২৪-২৫) : তমোহন, সাহিত্য ও ইতিহাসের পাতায় উত্তরবঙ্গ, দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২৫

স্বপ্নদর্শীর আজব কাহন | ভাস্কর সিনহা | মুক্তগদ্য ৩


সে এক আজব সময়। এই মহাবিশ্বের, মহাকালের এক কোণে, এক তুচ্ছাতিতুচ্ছ স্থানে ও ক্ষণে তিলকে তাল তৈরির পরিকল্পনা চলছিল। স্বপ্নদর্শী এক অবাক, আশ্চর্যের ছেলে। সবাই ছুটছে, দৌড়চ্ছে, সময়ের সাথে পণ করে কার্য সাধন করছে। স্বপ্নদর্শী শুয়ে, বসে কাটায়। দিনের অর্ধেক সময়ই বসে ভাবে, ভাবতে থাকে। কিভাবে এই ইঁদুর দৌড়ের হাত থেকে বাঁচা যায়? জগতে দু ধরনের মানুষ আছে। এক ধরনের মানুষ অন্যদের চালায়। অন্যরা প্রথম দলের কথা মেনে চলে। একদল শাসন করে। অন্যদল শাসিত হয়। এখন এই শাসনের বা শোষণের মাত্রা ভেদ আছে। শাসক, শাসিতের সাপ-লুডু খেলা যে কখনোই হবে না তা নয়, এবং শাসকের দলে আসার প্রতিবন্ধকতা সবাই যে পার করবে তা নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাধা দুরূহ হলেও, রাজনীতির কারবারিরা বেড়া ডিঙানো বেশ সহজ - সরল, জলবৎ তরলৎ করে ফেলেছে। পুঁজি ও পুঁজিহীনতার রকমফের নিয়ে বিদ্যা বিজ্ঞেরা অনেক তত্ত্বের বা তথ্যের অবতরণিকা করতেই পারেন। কিন্তু সে কূটকচাল থাক এখন।

স্বপ্নদর্শী ভাবে- খাওয়া, পরা, আর ছাদের কথা। সে না হয় পাওয়া গেল। কিন্তু তারও তো রকমফের আছে। কোথায়, কত দূরে গেলে সেই খাওয়া, পরা, আর ছাদের পরিমাণ আত্মা তুষ্টিকরণে উপায় করবে তা যে বিচার্যের বিষয়? প্রয়োজন আর চাহিদা যে ভিন্ন মার্গী। প্রয়োজন মিটলেও চাহিদা যে অনন্ত। কোথায় তো থামতে হয়। কখনো পরিবার, কখনোও পরিস্থিতি, কখনোও ভাগ্য বা দুর্ভাগ্য, কোথাও কাউকে থামিয়ে দেয়।

সেই কুচি- কুচি পেঁয়াজের সাথে, ধানী কাঁচা লঙ্কায়, কিছু ছোট ঘনকের মাপের মতো আলুর, মিলে মিশে, ছেঁচা আদায়, হলুদে, তেলে, জিরে- ধনের গুঁড়য় মাখামাখি হয়ে, চিমটের নমকের স্বাদে, একটু পরে আসা চাকতি বেগুনে, আগে এলে যে ঘ্যাঁট হয়ে যেত তার বেলা? ধীমে আঁচেই ঠিক, পুরো আঁচে যে সব জ্বলে পুড়ে যাবে।

কেমন বাসি হয়ে থাকে বেলা। বিছানায় জড়ানো- মোড়ানো লেপে, কুঁচকে সরে আসা বিছানার চাদরে, থুবড়ে থাকা বালিশে, স্নান ঘরে পপাত চ, মমার চ হয়ে পড়ে থাকা ঝরা নষ্ট কেশরাশির পাশ কাটিয়ে, এখানে- সেখানে অবহেলায় শরীরের ছলকে পড়া জলে, সাবধানে পাশ কাটিয়ে সাবান- ফেনিলের দুরন্ত সম্ভাবনার খারিজের প্রচেষ্টায়। ডাস্টবিনে পড়ে কিছু ব্যবহৃত টিস্যু, সঙ্গে আরো কিছু যোগ হয়। যোগ হলে, পরে বিয়োগও তো হবে। এই সাম্যাবস্থায় বিরাজ বাসনায় প্রতিনিয়ত কাটাকুটির অছিলা মাত্র।

স্বপ্নদর্শী অনন্তের সম্ভাবনায় বলীয়ান্‌ ছিল। সম্ভাবনা সর্বদাই অনন্ত। অনন্তের পথে যেতেও পরিকল্পনা লাগে। এমনি এমনি কোন কিছুই হাজির হয় না। রসদ হানিতে পরিকল্পনা বিগড়ে যায়। আধা পথে থামতে হয়। কখনোও সখনোও অপরিকল্পিত ইচ্ছা পথ মাঝে মুখ থুবড়ে পড়ে। মানুষ কতদূর যাবে, তা এক আন্তরিক চলন শক্তির উপর নির্ভরশীল। সেই আন্তরিক চালিকা শক্তি ই কাউকে পৌঁছে দেয় হিমালয়ের চূড়ায়, কাউকে অ্যান্টার্কটিকার হিমবাহে।

কতো কালের ধুলোয় মলিন পর্দা ঐ সোনালী স্ট্যাণ্ডে নিলম্ব থেকে কিছুটা ঘরের আব্রু বজায় আর বাইরের ধুলো- ময়লা ও প্রখর উত্তাপ হতে মুক্তির আভাষ। ধোয়ার তরে স্ট্যাণ্ডের পরিপাটি থেকে ছাড়া পেতেই কিছু তন্তুর হাল ছেড়ে দেওয়া, ভেতরে এতো জেলজেলে হয়েছে, ছিঁড়ে জীর্ণদশায় প্রচুর বাইরের চোখ হয়েছে। ঐ ছিন্নে চোখ মেলে আসে পারিপার্শ্বিক বসতের দৃশ্য, দিনযাপনেরও। পাশাপাশি রোদে ভিজে গা গরম করে কিছুটা সাদাটে ক্ষয়াটে পাজামা, আগে- পিছে কিছু দাগ হয়ে রয়েছে অনবরত বিরক্তিকর অভ্যাসে, সাথে সঙ্গী অভ্যন্তরীণ জামাকাপড়, সব ঠিক বোঝা না গেলেও সোনালী উদ্ধত বক্ষবরণী সার্বিক ভাবে প্রতীয়মান।

সামনে ধু- ধু মাঠ ছিল, কিছু অগোছালো ঝোপঝাড়, ছেলেরা বল পেটাত, ধেড়ে দুষ্টু গুলো পুঁচিগুলোকে। এখন মাঠ কই? চারিদিকে মাটি ফুঁড়ে বাড়ি। মানুষের সংখ্যা বেড়ে চলেছে, বৃহৎ পরিবার অনেক ছোটতে ভাঙছে। ইতি- উতি কিছু পার্ক বনছে। সবুজ তো লাগবেই লাগবে। গাছেরা সালোকসংশ্লেষ না করলে আর নারীরা সন্তান ধারণ না করলে সভ্যতার বিনাশ যে অবশ্যম্ভাবী।

স্বপ্নদর্শী ভেবেই চলে জীবনটাকে যেমন- তেমন ভাবে ধারণ করে চলবে, না একটু উওম উপায়ে পালন করবে। কিন্তু তা কি উপায়ে? মহাজ্ঞানী, মহাজন যে পথে গমন করে গেছেন, তাই দেখে কি? কিন্তু তা তো খুব দুরূহ। সে তো আদতে অলস। কত কি ভেবে রেখে করা হয়ে ওঠে না। কত শত পরিকল্পনা শেষে ঠাণ্ডা জলে নিমজ্জিত হয়। তবে হাল না ছাড়াই ভালো। মন সহজেই লঘুগামী হতে পারে। তা হলেই মুশকিল। মনকে উচ্চাভিলাষী করাই প্রকৃত সাধনা? ষড়রিপুর প্রলোভন থেকে মনকে সুপথে রাখাটাই অধিকতর কাম্য। যারা তা পারে, তারাই সাধারণ হতে অসাধারণের তকমা পাবার যোগ্য। তবে বিপণনের তরে নাম মাহাত্ম্য কত দূরগামী হবে তা ঠিক সরল রৈখিক নিয়মগামী নয়। অনেক নামে হয়ত অনেক কায়েমী স্বার্থ জড়িয়ে থাকে।

সে ছিল এক শান্ত শহর। এককালে সাত সকালে জলের ট্রাঙ্কার পিছ পাইপ দিয়ে জল ঢালতে- ঢালতে অ্যাসফল্টের রাস্তা ঝাঁ চকচকে করে যেত। দু পাশের সারি- সারি দেবদারু স্নিগ্ধছায়াতুর পরিবেশের আবেশ নিয়ে আসত। বনজ গন্ধ কিছুটা সইয়ে সাগর ভাঙ্গাতে দূর্গাচরণের লোকালয়ের সূচনা লগ্ন কাটিয়ে এই শহর কিছুটা আধুনিক হতে শুরু করে বিধান রায়ের পরিকল্পনায়। ক্ষমতা হস্তান্তরের পর দেশকে নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছিল। কোটি- কোটি মানুষের মুখে অন্নের জোগানের প্রয়োজন ছিল। আমেরিকান স্থপতিদের মস্তিষ্কপ্রসূত এই শহরে কোন ব্রিটিশ জমানার ছাপ ছিলো না। বরং এই শহরটির মিল কিছুটা পশ্চিম আমেরিকার স্নিগ্ধ ছোট শহর প্য়াসাডেনার সঙ্গে। তবে প্য়াসাডেনার রাস্তাগুলোয় জ্যাকারান্ডা আর পাইন গাছের সারি, যা দুর্গাপুরে একান্তই অপ্রতুল। যদিও বেশ কয়েকটি রাস্তায় কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, অমলতাসের সময়ে- সময়ে বাহার নয়নাভিরাম।

দেশভাগের ক্ষত তখনও জাজ্বল্যমান। ধৃতরাষ্ট্র স্বরূপ মোহনদাসের সামনে মাউন্টব্যাটেনের, আলি জিন্নাহর আর জওহরের ভাগ বাটোয়ারার নকশা মাফিক সম্পত্তি ভাগ। তখন রাজনীতিও একটু আলাদা ছিল। বা ঘটনাচক্রে যিনি পশ্চিমবঙ্গ সামলানোর ভার পেয়েছিলেন, তিনি বোধহয় অন্য ধাতুর ছিলেন। অকৃতদার মানুষটি স্বার্থ হীন ভাবে রাজ্যটির উন্নতি সাধনে ব্যস্ত ছিলেন। তবে পীড়া আর কিরা ছিল অন্যত্র। ব্রিটিশ শত্রুর ভয় দেখানো তো আর যাবে না। দেশে যে গণতন্ত্রের অবতারণা ঘটেছে। ক্ষমতা দখলের উপায় কেবল ভোট। কেউ প্রলেতারিয়েতের নামে, কেউ গরিবের নামে, কেউ কৃষকের নামে, কেউ শ্রমিকের নামে ভোট চাইবে। ক্ষমতা দখলের নগ্ন নাচ হয়ত অন্যত্রও দেখা গেছে। কিন্তু জন- গণ- মনের হাতে ক্ষমতার সাধারণীকরণের এমতাবস্থায় বিকেন্দ্রীকরণের মর্যাদার হ্রাসের উদাহরণ অতীব দুরূহ। জ্যোতিরা, মায়াবতীরা, লালুরা ইত্যাদিরা উঠে আসবে। বোধহয় বিধান কাল পর্যন্তই কিছু স্বার্থ হীন মানুষে রাজনীতি করে গেছে।

ধোঁয়া জ্যাম, চাকা জ্যাম তখনও অনাগত। অশোক কুমার নাইটে কিছু কুশ্রী কাজ তখনও প্রলেতারিয়েতের নামে চালানোর প্রয়োজনীয়তা আসেনি। আবার এক দেশভাগ তখনও কিছু দূরে এবং তখনই দামোদর আর অজয়ের মাঝে গড়ে উঠছে দুর্গাপুর ইস্পাত নগরী। স্বপ্নদর্শী নবীন শহরেই মিষ্টি স্বপ্নের মতো এসেছিল। নতুন শহরের মতোই সুন্দর নতুনভাবে বেড়ে ওঠার অনন্ত সম্ভাবনার আশা ছিল।

স্বপ্নদর্শী আই আই টিতে পড়তে গিয়ে শিখেছিল বিভিন্ন শক্তির রূপ ও বিন্যাস। জেনেছিল শক্তিধর রাষ্ট্রেরা কিভাবে শক্তিকে আহরণ, উপযোগ ও বিনিয়োগ করে। দুর্গাপুর হবার ক্ষেত্রেও ধানবাদ, আসানসোল, রাণীগঞ্জের কয়লা শক্তির অবদান প্রণিধানযোগ্য। তারপর নিকট রেল যোগাযোগ বা নিকটবর্তী কলকাতা বন্দরের সুবিধা বিশেষ উল্লেখ্য।

ঐদিকে ব্রিটিশ সাহায্যে তৈরি হচ্ছিল দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা, যা পরে রাষ্ট্রায়ত্ত হয়ে গেল। দুর্গাপুর ইস্পাত বরাত পেল দুর্গাপুর ব্যারেজের কাজ। তৈরি হচ্ছিল জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। আরো অনেক সংস্থাও প্রস্ফুটিত হচ্ছিল সাথে- সাথে- অ্যালয় স্টিল, ফিলিপস কার্বন, দুর্গাপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইত্যাদি ইত্যাদি। পরিকল্পিত শহর হওয়ার কারণে শহরের বাসিন্দারা ছিল ঐ সব সংস্থার কর্মচারী বৃন্দ। বেনাচিতি বাজার এলাকা একটু ঘিঞ্জি হলেও, শহর একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তার উপর নয়নাভিরাম পার্ক, শহরের কেন্দ্র স্থলে সিনেমা হল ইত্যাদি বিবিধ মনোরঞ্জনের উপায় ছিল। কিন্তু সে সৌন্দর্যও বেশী কাল আর রইল কই? কারখানায় বন্ধের হিড়িকে কর্ম সংস্কৃতি, কুসংস্কৃতি, অপসংস্কৃতি সব একাকার হয়ে গেল।

স্বপ্নদর্শীর বাবা সব সময় ঘরে ফিরতে চাইতেন। আমৃত্যু তাঁর আক্ষেপ ছিল ঘরে ফেরা নিয়ে। তিনি রাণীগঞ্জকে তাঁর ঘর মানতেন। তাঁর পিতা অবশ্য পাত্রসায়রের পৈত্রিক বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন ব্যবসা নিমিত্ত এবং রাণীগঞ্জেই থেকে যান। সেখানেই চার পুত্র ও দুই কন্যাসহ বিশাল যৌথ পরিবার। স্বপ্নদর্শীর বাবা এগারো বছর রাণীগঞ্জ থেকেই তাঁর কর্ম স্থলে যাতায়াত করেছেন। তারপর কি যে হল বিভিন্ন টানাপড়েনে এসে উঠলেন দুর্গাপুরের কোয়ার্টারে। যেখানের বাস তিনি কখনোই অন্তর থেকে মেনে নিতে পারেননি। তখনও যেতেন প্রতি সপ্তাহে। তাঁর কাছে রাণীগঞ্জে ফেরা ছিল ঘরে ফেরা। এমনকি বাঁকুড়ার মুড়িওলায়া, কি রিকশাওয়ালা পেলেও তিনি দেশের গল্প জুড়ে দিতেন।

ঘরে ফেরার কথা ভাবতেই নিজেকে চেনার ও জানার বিষয় আসে। স্বপ্নদর্শী অবশ্য বাপকা মাফিক, কি সিপাহীর ঘোড়াও নয়। হাতের পাঁচটা আঙুলই কি আর সমান হয়? স্বপ্নদর্শী অতোটা ঘরকুনোও নয়। দেশ- বিদেশের রং, রূপের চাখার বাসনা মনের কোণে ধিকিধিকি। কত জনে কত দিকে যায়। সেও সুযোগ পেলে যায়। সরস হরিণ তো এমনি- এমনি সিংহের মুখের অভ্যন্তরে আসবে না। একটু পরিশ্রম তো করতেই হবে। গা না ঘামালে গোলের জালে বল জড়াবে কেন? নিজেকে ঠিক চিনতে পারা একটি জটিল বিষয়। খুব কম জনেই তা পারে? তা কি পারে? বুদ্ধ কি সত্যি জরা, ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন? তাঁর অহিংসা কি পৃথিবীকে নিরাপদ করেছিল? তবুও অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হয়। সবল মতের প্রতিস্পর্ধী দুর্বল মত হতে চায়। না পারলেও কখনো-কখনো তো মন তো চায়। বোধ আর বোধি আনা নিরন্তর প্রচেষ্টারই নাম? তবুও কি নির্বাণ লাভ সম্ভব। কারোরই জানা নেই। কৃচ্ছসাধনের ক্লেশ যুগে- যুগে কোন-কোন ভারতবর্ষীয়রা করে গেছেন। তাঁদের কি মোক্ষ লাভ হয়েছে? জানা তো নেই। কারোওই সব কিছু জানা নেই। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। বিজ্ঞানীদের মতো। এডিসনের মতো। তড়িৎকে বাল্ব বন্দী করার নিরন্তর খেলায়।

দেশেও সুরু হয়েছে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। দেশকে খণ্ডে- খণ্ডে বিভক্ত করার। দেশ, জাতি, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যনীতি, পরিকাঠামো, শিক্ষা, ইত্যাদি সবই এখন রাজনীতির প্যাঁচ- পয়জারে খণ্ড- বিখণ্ড আর চূর্ণ- বিচূর্ণ। এই রাজনীতি করতে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতাই লাগে না। টিপছাপেও মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য মন্ত্রী হতে কোনও বাধা নেই। স্বপ্নদর্শী চোখের সামনেই দেখল মণ্ডল কমিশনের প্রতাপ। তার আগের আর পরের ব্যাপার গুলো উহ্যই থাকুক। তারপর সরকারি চাকুরির অপ্রতুলতা। যেটুকু আছে তাতে রঙের আর ধনের রমরমা। বৌদ্ধিক যোগ্যতার মাপকাঠি বঙ্গোপসাগরের তলদেশে খাবি খাচ্ছে। স্বপ্নদর্শী স্বপ্নকে দামোদরে বিসর্জন দিতে শিখল। যদি অজয়ের পাড়ে কখনো কোন নতুন ক্ষীণ স্বপ্ন ভেসে ওঠে, তা হবে হয়ত পূর্ব জন্মের কিছু সুকৃতির ফল বা অগ্রজদের স্নেহাশীর্বাদ।

তবুও বোধহয় প্রেম প্রীতি থাকে। ওটাই কি বেঁচে থাকার অক্সিজেন? হতাশ হতে- হতে পার ভাঙা নদীর মাঝে যাবার আগে কেউ হাতটা ধরে ফেলে। সে এক শীতল, কোমল, স্নেহের হাত। সুজাতার পরমান্ন মহাভিক্ষুকেও জীবনদান করে। কেউ অপেক্ষায় থাকে। প্রতীক্ষা বড় দীর্ঘ। তবে প্রতীক্ষা শেষে রজনীগন্ধা বা লালচে-কালচে গোলাপের সুবাস কিছুক্ষণের জন্য হলেও বড়ই মধুর। মৈত্রেয় জাতকের মানা না মেনে গৌতমী আর যশোধরা সঙ্ঘে আসেন। তাঁদের ছাড়া সংঘ যে অপরিপূর্ণ তা এক জন্মেই বোধ হয়। পরমহংসকেও পরম হতে সারদা মা যে লাগে। প্রকৃতি পুরুষকে ধারণ করে থাকে যে। দুনিয়ার রক্ষার্থে ঐ  প্রকৃত ই  যা টিমটিমে ভরসা। পুরুষে তো দুনিয়ার দফা রফা করে রেখেছে।

Comments

Popular Posts

Tamohan, Govt. of India Registration Number (PRGI) WBBEN/25/A1160, New Genaration Acclaimed Bengali Literary Research Journal (Language, Literature & Cultural Studies) & Independent Publication. Maynaguri, Jalpaiguri, West Bengal, India. Estd. 2023.