তমোহন উত্তরবঙ্গের অন্যতম ভারত সরকারের পি.আর.জি.আই কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বার্ষিক গবেষণামূলক মুদ্রিত পত্রিকা। পাশাপাশি লেখক-পাঠকদের অনুরোধে অনলাইন ডিজিটাল ওয়েবপত্র হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ। সারাবছর জুড়ে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্ত থেকে তমোহনে লিখতে ও পড়তে পারবেন; পাশাপাশি দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে তমোহন ক্রয় করতে পারবেন। আপডেট পেতে আমাদের সাথে সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটে যুক্ত থাকুন। প্রকাশিত সংখ্যার বিবরণ : ১. (২০২৩-২৪) : তমোহন, ময়নাগুড়ির ইতিহাস, প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, নভেম্বর ২০২৩, ২. (২০২৪-২৫) : তমোহন, সাহিত্য ও ইতিহাসের পাতায় উত্তরবঙ্গ, দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২৫

গ্যালপিং সময় | শ্যামলী সেনগুপ্ত | গল্প ১৫

 

রাতে দুজন খাবেতাই, এই যে ছোলার ডাল করেছিমাংস হয়ে গেছেবাটা মাছ ভাজছি আমি বাটা মাছ পছন্দ করি না আমার কর্তা খুব ভালোবাসে বাটা মাছ ভাজাএই যে ভেজে রেখেছিবাকি মাছ সাঁতলে রাখছি, ব্যাস! সাঁতলানো মাছগুলো কী হল দেখার জন্য একটা এক্সোয়াই ক্রোমোজম আবার রীলটি ঘুরিয়ে আনেনাহ্, ওটুকুই

পরের দিন আবারআজ ব্রেকফাস্টে পরটা আর আলুচচ্চড়ি বানিয়েছিআলুচচ্চড়ি হয়ে গেছেএখন পরটা ভাজছিআমাদের দুজনেরই স্যুগার আছেময়দার পরটা খাওয়া উচিত নয়তবু মাঝেমধ্যে বানাইসাদা ধবধবে পরটা দেখতে বেশ ভাল লাগেখেতেও মুশমুশে হয়এক্সোয়াই এটুকু দেখতে দেখতে ভাবে পরশু রাত থেকে কিছু খাওয়া হয়নি

কোনদিনই বা ঠিকমতো খাওয়া হয়! অফিসের সময়টা বড়ো দুঃসময়দুঃসময় এই অর্থে যে তার বায়োলজিকাল ক্যারেক্টারগুলোর পরিবর্তন ঘটেছেঘুমের যে সময়টা জ্ঞান বয়স থেকে জেনে এসেছে,তাতে পরিবর্তন এল এই চাকরিরপর থেকেসে ঘুমোয় সকালেওঠে বিকেলেলাঞ্চ বলে তার জীবনে আর কিছু নেইউঠে সিগারেটতারপর চাদুধ-চাবেশি চিনি দিয়েকড়া করেতারপর স্নানআবার চাসিগারেটতারপর টোটো ধরে সেক্টর থ্রিডিনার অফিসেরাত এগারোটায়মাঝে চাআর কয়েকবার স্মোকিং জোনে যাওয়াযদিও যখন সে কাজে ঢুকে যায়,তখন চারপাশে কী ঘটছে বুঝতে পারে নাকম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ আর কানে ইয়ারডোপসতখন নাড়ির টান তাকে জিনের মায়াডোরে বেঁধে রাখেমিসেস তপাদারের ক্যারেক্টারেও এমন একটা ব্যাপার সে লক্ষ্য করেছেসংসারের কাজ বলো অথবা স্কুলের কাজ, শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিচ্ছুটি দাঁতে কাটতো নাওই শুধু কাপের পর কাপ চালাল চাট্যালটেলেচিনি ছাড়াকাজ শেষ হলে আরাম করে বসে আরেক কাপহালকা সোনালি সেই বিশেষ চায়ের সুগন্ধি ছড়িয়ে যেত ফ্যানের ব্লেডের দুরন্ত ঘূর্ণনে

এক্সোয়াই মনে মনে হাসেমনের ভেতর থেকে হাসিটা অদ্ভুত একটা মোচড় দিয়ে ঠোঁটে ফুটে ওঠেআর তার সামনে দাঁড়িয়ে ডাবল এক্স বুঝতে পারে না হাসি আসে কী করে!দু' মাস হয়ে গেছেস্রেফ বসে আছে ও! কতবার বলেছে, খোঁজখোঁজখুঁজতে থাকোলিঙ্কেডিন, নৌক্রি ডট্ কম্ এমন সবখানে নিজের রেজ্যুমে দিয়ে রেখেছেতাছাড়া,যাচ্ছে না,সেটা সত্য নয়এই তো কসবা গেছিলবাবলাতলা থেকে যথেষ্ট দূরএক ঘণ্টার উপর চলে গেল যাতায়াতেতার উপর অফিসটা ঠিকঠাক লাগল নাচারদিকে যা স্ক্যাম! বাপ্ রে!

ঊনিশ বছর ধরে চাকরি করছে এক্সোয়াইমফস্বলের কলেজ থেকে পাশ কোর্সে গ্র্যাজুয়েশন করে সেই স্মার্ট সিটিতে বেড়াতে গিয়ে যেন ফাঁদে পড়ে গেলআশেপাশে যাকেই দেখে, আত্মীয় বা বন্ধু, কেউ পড়ছেকেউ কেউ চাকরি করছেবাপ রে বাপ! রাতে ক্যাব আসেনির্দিষ্ট জায়গা থেকে একেকজন ওঠেতারপর সোজা অফিসকনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো

এরা সব ভোরে অথবা সকালে ফেরে ঘুমন্ত চোখেতার সমর সেনের কবিতা মনে পড়েসেও ঢুকে গেল ওই দলেশনি রবি ছুটিশনিবার ঘুমকাচাকাচিরান্নারবিবার প্র্যাকটিস তাদের ব্যান্ড ওখানেওমফস্বলের কলেজ ফেস্টে তারা কাঁপিয়ে দিতএক্সোয়াই অ্যাকোয়াস্টিক গিটারে তুখোড়তার আঙুলে যাদু আছেসেটাও এক যাদু-নগরচাকরি ছেড়ে দেওয়া আর পরের দিন কি সেদিনই পেয়ে যাওয়া! এটা যাদু নয় তো কি?

হাসিটা মলিন হয়ওই যে ধর্ণায় বসেছে যারা,তাদের পাশে সাধারণ মানুষ আছেসবসময় পাশে এসে দাঁড়াতে না পারলেও তাদের সহানুভূতি সঙ্গে থাকেএদের নিয়ে সান্ধ্যকালীন তর্কবিতর্কে টিভির চ্যানেলগুলো মানুষের বসার অথবা শোওয়ার ঘরে ফেটে পড়েযেন..'তোমাকে ভাবাবই ভাবাব..'তাদের নিয়ে কেউ ভাবে নাতাদের টার্মিনেট করা হয়পেছনে নানা কারণ থাকে এতদিনের অভিজ্ঞতার এক্সোয়াই জানে আই.টি. কোম্পানিগুলো টার্মিনেট করলে ঘরের লোকবাইরের লোক বাঁকা চোখে তাকায়যেন টার্মিনেট হয়ে যাওয়া কর্মীরা দেয়ালের খাঁজে , তোষকের ভাঁজে গৌরীসেনের টাকার বাণ্ডিল ঠুসে রেখেছে

গাঁজা-মদ-চরসের ঠেকে জীবন যৌবন দিয়ে কাজকর্ম, সংসার ভাসিয়ে দিয়েছে অকাল বন্যায়প্রোজেক্ট শেষ হয়নতুন প্রোজেক্ট আসে না অথবা আসতে দেরি হবেস্যালারি এক জায়গায় থেকে যায়গুজগুজ ফিসফিস বেড়ে যায়এপ্রিল আসার আগেই এসব শুরু হয়কাজ অনুযায়ী স্যালারি না হলে কারই বা ভাল লাগেসংসার পুরনো হলে খরচের পরিমাণ বাড়ে বৈ কমে নাসবই পারম্যুটেশন-কম্বিনেশনের ব্যাপারপুরো ছকটাই সাপলুডোর বোর্ড

''দাদা, কোন স্কুল?''

 "স্কুল নয়প্রাইভেট জব'' প্রশ্নকর্তার বয়স তিরিশ-বত্রিশচাকরি হারানো চোখের চাহনিতে তাচ্ছিল্যএকটা এন.জি.ও. আজ ওদের লাঞ্চের ব্যবস্থা করেছেএকটা ম্যাটাডোর এসে দাঁড়ায়জলের পাউচ আর খাবারের প্যাকেটের ক্রেট নামাতে থাকে ব্যস্তসমস্ত কিছু ছেলে মেয়েপ্রশ্নকর্তা তার দিকে একবার তাকায়পাশের ছেলেটিকে কিছু বলে কানের কাছে মুখ নিয়েএক্সোয়াই উঠে পড়েবাড়ি ফিরতে হবেবড়ো মেয়েটি এখনও বালিকাআজকাল বিনা কারণে বাইরে বেরোলে মেয়ে চিন্তা করেমায়ের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে, "বাবা আসছে না তোফোন করোআমি করব?" প্রায় একঘন্টা আগে বেরিয়েছেএঃ! চার্জ ফুরিয়ে গেছেফোন সুইচড অফএরা দলবদ্ধসে একাএরা একে অন্যকে তাদের কষ্টগুলো শেয়ার করেসে নিজের মনকে অনেক প্রশ্ন করেতবে অপরিশিলীত মনের একটা অদ্ভুত দোষ আছেনিজের ত্রুটিগুলো কখনোই ওপেন করতে পারে নাআর সকলের দোষত্রুটি, ভুলভ্রান্তির উপর ফোকাস করে

মাছ ভাজার গন্ধ মেখে ডাবল-এক্স দরজা খুলে দেয়"আজ কি ডাল ,মাছভাজা?"

"কোথায় ঘুরে এলে?বললাম প্রিমিয়াম নৌক্রি ডট কম সাবস্ক্রাইব করওখানে আরও ভাল অফার আছে"

"আরও ভালোর কোনও শেষ নেইএকটা ধর্ণা মঞ্চে গেছিলামএমনিসেক্টর থ্রির কাছাকাছি"

"আমরা দু'মাসেই কেমন মুষড়ে পড়েছিআর ওদের কথা চিন্তা কর!"

"অনেকে জমিজমা বিক্রি করে চাকরি কিনেছিলআসলে ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ডের চাকরি একটা ক্রেজকত মাইনে বলো তো! আর আমাদের? '' ঘন্টা কাজস্যালারি বাড়াতে বললে ওদের চুলকানি হয়"

"সেইজন্য তো বলছি একটু ভালো অফারগুলো ট্রাই কর।"

"ধুসস...আর ভাল লাগে নামা কতবার বলেছিল, 'এস.এস.সি. তে অ্যাপিয়ার করকরলেই হয়ে যাবে পারবি তুই' আমি তখন যাদু নগরীর প্রেমে মজে আছিব্রিটিশ টেলিকমের কাজ!"

এই ভদ্রমহিলা রোজকার রান্নার ভ্লগে কীসব আনসান বলে যায়! কত মানুষ খেতে পায় নাখাবার জুটছে নাকত মানুষ আর না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেশুধু কি এখানে!গাজার ছবিগুলো দেখলে মনটা কেমন হয়ে যায়ছোটটাকে জড়িয়ে ধরেবড়টা স্কুল থেকে ফেরার অনেক আগে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকেপাশের গুমটিতে পাঁচ টাকার চা পাওয়া যায়আর গাজায় শেষপর্যন্ত ফেমিন ডিক্লেয়ার করল জাতিসংঘ!

বড় মেয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে রাস্তা পার হয় এক্সোয়াইস্কুলের গল্প, বন্ধুদের গল্প বলতে বলতে তারা বাড়িতে পৌঁছয়খেতে খেতে বড়টি বলে," বাবা খেয়েছে?"

"নিজের খাবার খেয়ে উঠে পড়বোন ঘুমোচ্ছে উঠে পড়লে মুশকিল" ডাবল-এক্স বেডরুমের ঠাণ্ডায় ঢুকে পড়ে

এক্সোয়াই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অর্ধেক তৈরি হওয়া বিল্ডিংটা দেখেএমন প্রায়দিনই দেখতে থাকেআগে এদিকটা পুরো ফাঁকা ছিলকি সবুজ!সবুজে ছেয়ে ছিলজংলা ঘাসগাছনাম না জানা গাছগরু চরে বেড়াতফিঙে পাখিগুলি গরুর পিঠে চড়ে যেন বেড়াতে যাচ্ছে এমন মেজাজে বসে থাকতোপ্রায়ই তারা বেজি দেখতে পেত ওখানেএকবার শেয়াল দেখেছিলতারপর একদিন সবুজ খুবলে খাবলে প্লিন্থ ঢালাই হলবড়ো দ্রুত উঠছিল তারপর হঠাত একদিন বন্ধ হয়ে গেল কাজসেই সময় ব্যালকনিতে আসা যেত নাএকটা বেডরুমের ওদিকের জানলা পুরো বন্ধ থাকতকাজ থেমে যাওয়ায় ওদের জানলা,ব্যালকোনির দরজা সব খুলে গেল কিন্তু ছ্যাঁচড়ার মতো থমকে যাওয়া বিল্ডিংটা দাঁড়িয়ে থাকল হতভম্ব হয়ে

 (২)

কিছুক্ষণ আগে মেল ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়লশূন্য ট্র্যাকইস্পাতের রেলের ওপর আলোর প্রতিসরণএকটা বিরাট ইঁদুর ছুটে গেল এ ধার থেকে ও ধারে

ওদিক থেকে জোলো হাওয়া আসছে শূন্য ট্র্যাক ছুঁয়েএরপর আরও অনেক ট্রেন আসবেএক্সোয়াই বসে থাকেকখনো ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে ওভারব্রিজ পেরিয়ে অন্য প্ল্যাটফর্মে যায়সেখানে অপেক্ষা করেকার জন্য এ অপেক্ষা?কেউ কি বলেছিল, আসবে?

 আসা-যাওয়ার একটা মাঝামাঝি জায়গায় আটকে আছে এক্সোয়াইভেবেছিল কাজটা ছেড়ে দেবেসপ্তাহের সবকটা দিন অপেক্ষা করবে তাদের জন্যমিসেস তপাদার বোঝালেন, "কাজ ছেড়ে দিলে তোমার শূন্য মস্তিষ্ক আরও ছটফট করবেতাছাড়া,তুমি তো বলেইছিলে, জব চাইজব না করলে ওদের দেখাশুনো করবে কী করে... সুতরাং কাজে যাও।"

এক্সোয়াই সপ্তাহের ছয় দিন কাজ করে। স্যালারি জমছেএসব তার সন্তানদের ভবিষ্যত গঠনে লাগবেমিসেস তপাদারের কথামতো সে শুধু রবিবারকে বেছে নিয়েছে অপেক্ষা করার দিন হিসেবেকোনও এক রবিবারেই তাদের পৌঁছনোর কথা ছিল এই শহরেসেটাও এক স্বপ্নও নিজেও স্বপ্ন দেখিয়েছিল, হিমালয়ের কাছাকাছি থাকলে মন বড় হয়ভাবনাচিন্তার জগত বিস্তৃত হয়এসআয়

আসলে আকর্ষণের একটা ব্যাপার আছেমাধ্যাকর্ষণ সবকিছুকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে টেনে আনেএও অনেকটা তেমনওদিকের জোর বেশিওদিকের দাপট বেশিএক্সোয়াই অযথা দাপট দেখাতে পারে নাকাউকে জোর করা তার স্বভাবে নেইএটি সে জিন মার্ফত প্রাপ্ত হয়েছেও শুধু বুঝিয়ে বলতে পারেতাই রবিবারগুলো তার আর মিসেস তপাদারের স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই কেটে যায়কোন কোন ট্রেনে আসতে পারে তার হিসেব করে নেওয়ার পর তারা অপেক্ষার সময়টুকুও নির্দিষ্ট করে নিয়েছেসময় পেরিয়ে গেলে তারা ঘরে ফেরেএকটি অটো ঠিক করা আছেওতে চেপে তারা আসেঅটো চালক ঠিক সময়ে এসে ওদের পিক-আপ করেচালকটিও এই কয়েক বছরে তাদের পারিবারিক বন্ধু হয়ে গেছেকাজে যাওয়ার সময়ও ঐ অটোতেই যায় এক্সোয়াইএকবার ভেবেছিল একটা বাইক কেনা যেতেই পারেশিক্ষা শেষে একটি লাইসেন্স তার দখলে আসতেই পারেতরুণ বয়সে অনেক খতরনাক রাস্তায় বাইক চালিয়েছে ওবন্ধুদের বাইকসে অনেক দিন আগের কথাশতাব্দী প্রাচীন গল্প না হলেও সেই বন্ধুরা ওকে ছেড়ে গেছেওর জগতটা ছোট হতে হতে মাত্র কয়েকজনকে নিয়েকাজের জগতের সঙ্গে এই জগতের অবশ্য অনেক ফারাকসে এক বিস্তৃত জগতবাইক আর কেনা হয়নিপরে কখনও কেনা যেতেই পারে ভেবে একটা ক্লসেটে তুলে রেখেছেঐ ক্লসেটে জমা আছে, কী কী হতে পারে তার তালিকাকী কী হবে তার স্বচ্ছ ভাবনাঅপেক্ষা শুধু, অপেক্ষার প্রহর শেষ হওয়া অব্দি

জেনেটিক আকর্ষণহুঁএটাই বলে থাকেন মিসেস তপাদারতা , সেই জেনেটিক আকর্ষণের যে অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা আছে একটি একদা হাসিখুশি আনন্দোচ্ছল পরিবারের সাড়ে সাতশ গ্রাম,সেই সুতোর প্রধান গিঁটটি ছিঁড়ে গেলেই এদিকে একটি তিনশ' ষাট ডিগ্রির কোণ তৈরি হয়ে যাবেএকটা বৃত্ত গড়ে উঠবে অনেকদিনের জমে থাকা বৃত্তান্ত নিয়েশুধু গিঁট ছেঁড়ার অপেক্ষাএরকম অপেক্ষায়

থাকতে থাকতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রাউজ করে এক্সোয়াইনেইনেইনেইকোথায় কোথায় না খোঁজে !কেউ এভাবে বেপাত্তা হয়ে যেতে পারে!ফোন তো সেই কবে থেকে বলে চলেছে সুইচড অফ্

 যেদিন শেষ মেসেজ দেখেছিল, 'সময়মতো আসব'ব্যসসেই সময় কই আর হল সুতোর!

গিঁট ছিঁড়ে গেলে,তবে! একটা মৃত্যু! তাহলে কি ও মৃত্যু কামনা করছে সেই সুতো ধারকের! মাথা গোলমাল হয়ে যায়"চলো, কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। খালি পেটে অপেক্ষা করার কোনও মানে হয় না"

ঠিক সেই মুহূর্তে মিসেস তপাদারকে খুব নিষ্ঠুর মনে হয়তবে উনি ওসবের ধার ধারেন নাজীবন তাঁকে প্র্যাকটিকাল করে তুলেছেপ্যাকেটে করে রুটি আর আলুমটর নিয়ে আসেন আর তখন দেখতে পান এক্সোয়াই রীলস দেখছে

আজ বেশি কিছু বানাইনিএই যে নারকেল কোরা দিয়ে শোলা কচু বাটাআর এই দেখ চিকেন করেছিআজ আলু দিয়ে মাখো মাখো চিকেন কারিআর এই যে ভাতএক্সোয়াই ফোন বন্ধ করেমন দিয়ে খেতে থাকে রুটি, আলুমটর, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কাওর মুখে কোনোরকম অভিব্যক্তি নেইখুব ক্ষিদে পেয়েছিল বোধহয়"নেক্সট রবিবার নারকেল কোরা দিয়ে শোলা কচু বাটা খাবগরম ভাত মেখে" 

মিসেস তপাদার ভাল করে দেখেন এক্সোয়াইয়ের মুখচোখচোখে মিটি মিটি হাসির ছায়াতিনি ঠিক প্রামাণ্য পর্বে আসতে পারেন নাকোনটার ফিউজ গেল, মাথা না মন?

(৩)

এখন রাত এগারোটাএক মা আর তার ছেলে দাঁড়িয়ে আছেচেনা পরিসরেপ্ল্যাটফর্ম গত কয়েক বছরে তাদের হাফ বাসস্থান হয়ে গেছে"পরের রোববার গরম ভাত আর নারকেল কোরা দিয়ে শোলা কচু বাটা"শিস দিতে দিতে হাওড়া থেকে এসে পৌঁছনো এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে থাকে এক্সোয়াই।

Comments

Popular Posts

Tamohan, Govt. of India Registration Number (PRGI) WBBEN/25/A1160, New Genaration Acclaimed Bengali Literary Research Journal (Language, Literature & Cultural Studies) & Independent Publication. Maynaguri, Jalpaiguri, West Bengal, India. Estd. 2023.