গ্যালপিং সময় | শ্যামলী সেনগুপ্ত | গল্প ১৫
রাতে দুজন খাবে। তাই, এই যে ছোলার ডাল করেছি। মাংস হয়ে গেছে। বাটা মাছ ভাজছি। আমি বাটা মাছ পছন্দ করি না। আমার কর্তা খুব ভালোবাসে বাটা মাছ ভাজা। এই যে ভেজে রেখেছি। বাকি মাছ সাঁতলে রাখছি, ব্যাস! সাঁতলানো মাছগুলো কী হল দেখার জন্য একটা এক্সোয়াই ক্রোমোজম আবার রীলটি ঘুরিয়ে আনে। নাহ্, ওটুকুই।
পরের দিন আবার। আজ ব্রেকফাস্টে পরটা আর আলুচচ্চড়ি বানিয়েছি। আলুচচ্চড়ি হয়ে গেছে। এখন পরটা ভাজছি। আমাদের দুজনেরই স্যুগার আছে। ময়দার পরটা খাওয়া উচিত নয়। তবু মাঝেমধ্যে বানাই। সাদা ধবধবে পরটা দেখতে বেশ ভাল লাগে। খেতেও মুশমুশে হয়। এক্সোয়াই এটুকু দেখতে দেখতে ভাবে পরশু রাত থেকে কিছু খাওয়া হয়নি।
কোনদিনই বা ঠিকমতো খাওয়া হয়! অফিসের সময়টা বড়ো দুঃসময়। দুঃসময় এই অর্থে যে তার বায়োলজিকাল ক্যারেক্টারগুলোর পরিবর্তন ঘটেছে। ঘুমের যে সময়টা জ্ঞান বয়স থেকে জেনে এসেছে,তাতে পরিবর্তন এল এই চাকরিরপর থেকে। সে ঘুমোয় সকালে। ওঠে বিকেলে। লাঞ্চ বলে তার জীবনে আর কিছু নেই। উঠে সিগারেট। তারপর চা। দুধ-চা। বেশি চিনি দিয়ে। কড়া করে। তারপর স্নান। আবার চা। সিগারেট। তারপর টোটো ধরে সেক্টর থ্রি। ডিনার অফিসে। রাত এগারোটায়। মাঝে চা। আর কয়েকবার স্মোকিং জোনে যাওয়া। যদিও যখন সে কাজে ঢুকে যায়,তখন চারপাশে কী ঘটছে বুঝতে পারে না। কম্পিউটার স্ক্রিনে চোখ আর কানে ইয়ারডোপস। তখন নাড়ির টান তাকে জিনের মায়াডোরে বেঁধে রাখে। মিসেস তপাদারের ক্যারেক্টারেও এমন একটা ব্যাপার সে লক্ষ্য করেছে। সংসারের কাজ বলো অথবা স্কুলের কাজ, শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিচ্ছুটি দাঁতে কাটতো না। ওই শুধু কাপের পর কাপ চা। লাল চা। ট্যালটেলে। চিনি ছাড়া। কাজ শেষ হলে আরাম করে বসে আরেক কাপ। হালকা সোনালি সেই বিশেষ চায়ের সুগন্ধি ছড়িয়ে যেত ফ্যানের ব্লেডের দুরন্ত ঘূর্ণনে।
এক্সোয়াই মনে মনে হাসে। মনের ভেতর থেকে হাসিটা অদ্ভুত একটা মোচড় দিয়ে ঠোঁটে ফুটে ওঠে। আর তার সামনে দাঁড়িয়ে ডাবল এক্স বুঝতে পারে না হাসি আসে কী করে!দু' মাস হয়ে গেছে। স্রেফ বসে আছে ও! কতবার বলেছে, খোঁজ। খোঁজ। খুঁজতে থাকো। লিঙ্কেডিন, নৌক্রি ডট্ কম্ এমন সবখানে নিজের রেজ্যুমে দিয়ে রেখেছে। তাছাড়া,যাচ্ছে না,সেটা সত্য নয়। এই তো কসবা গেছিল। বাবলাতলা থেকে যথেষ্ট দূর। এক ঘণ্টার উপর চলে গেল যাতায়াতে। তার উপর অফিসটা ঠিকঠাক লাগল না। চারদিকে যা স্ক্যাম! বাপ্ রে!
ঊনিশ বছর ধরে চাকরি করছে এক্সোয়াই। মফস্বলের কলেজ থেকে পাশ কোর্সে গ্র্যাজুয়েশন করে সেই স্মার্ট সিটিতে বেড়াতে গিয়ে যেন ফাঁদে পড়ে গেল। আশেপাশে যাকেই দেখে, আত্মীয় বা বন্ধু, কেউ পড়ছে। কেউ কেউ চাকরি করছে। বাপ রে বাপ! রাতে ক্যাব আসে। নির্দিষ্ট জায়গা থেকে একেকজন ওঠে। তারপর সোজা অফিস। কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে তুলে নিয়ে যাওয়ার মতো।
এরা সব ভোরে অথবা সকালে ফেরে। ঘুমন্ত চোখে। তার সমর সেনের কবিতা মনে পড়ে। সেও ঢুকে গেল ওই দলে। শনি রবি ছুটি। শনিবার ঘুম। কাচাকাচি। রান্না। রবিবার প্র্যাকটিস। তাদের ব্যান্ড ওখানেও। মফস্বলের কলেজ ফেস্টে তারা কাঁপিয়ে দিত। এক্সোয়াই অ্যাকোয়াস্টিক গিটারে তুখোড়। তার আঙুলে যাদু আছে। সেটাও এক যাদু-নগর। চাকরি ছেড়ে দেওয়া আর পরের দিন কি সেদিনই পেয়ে যাওয়া! এটা যাদু নয় তো কি?
হাসিটা মলিন হয়। ওই যে ধর্ণায় বসেছে যারা,তাদের পাশে সাধারণ মানুষ আছে। সবসময় পাশে এসে দাঁড়াতে না পারলেও তাদের সহানুভূতি সঙ্গে থাকে। এদের নিয়ে সান্ধ্যকালীন তর্কবিতর্কে টিভির চ্যানেলগুলো মানুষের বসার অথবা শোওয়ার ঘরে ফেটে পড়ে। যেন..'তোমাকে ভাবাবই ভাবাব..'। তাদের নিয়ে কেউ ভাবে না। তাদের টার্মিনেট করা হয়। পেছনে নানা কারণ থাকে। এতদিনের অভিজ্ঞতার এক্সোয়াই জানে আই.টি. কোম্পানিগুলো টার্মিনেট করলে ঘরের লোক, বাইরের লোক বাঁকা চোখে তাকায়। যেন টার্মিনেট হয়ে যাওয়া কর্মীরা দেয়ালের খাঁজে , তোষকের ভাঁজে গৌরীসেনের টাকার বাণ্ডিল ঠুসে রেখেছে।
গাঁজা-মদ-চরসের ঠেকে জীবন যৌবন দিয়ে কাজকর্ম, সংসার ভাসিয়ে দিয়েছে অকাল বন্যায়। প্রোজেক্ট শেষ হয়। নতুন প্রোজেক্ট আসে না অথবা আসতে দেরি হবে। স্যালারি এক জায়গায় থেকে যায়। গুজগুজ ফিসফিস বেড়ে যায়। এপ্রিল আসার আগেই এসব শুরু হয়। কাজ অনুযায়ী স্যালারি না হলে কারই বা ভাল লাগে। সংসার পুরনো হলে খরচের পরিমাণ বাড়ে বৈ কমে না। সবই পারম্যুটেশন-কম্বিনেশনের ব্যাপার। পুরো ছকটাই সাপলুডোর বোর্ড।
''দাদা, কোন স্কুল?''
"স্কুল নয়। প্রাইভেট জব।'' প্রশ্নকর্তার বয়স তিরিশ-বত্রিশ। চাকরি হারানো চোখের চাহনিতে তাচ্ছিল্য। একটা এন.জি.ও. আজ ওদের লাঞ্চের ব্যবস্থা করেছে। একটা ম্যাটাডোর এসে দাঁড়ায়। জলের পাউচ আর খাবারের প্যাকেটের ক্রেট নামাতে থাকে ব্যস্তসমস্ত কিছু ছেলে মেয়ে। প্রশ্নকর্তা তার দিকে একবার তাকায়। পাশের ছেলেটিকে কিছু বলে কানের কাছে মুখ নিয়ে। এক্সোয়াই উঠে পড়ে। বাড়ি ফিরতে হবে। বড়ো মেয়েটি এখনও বালিকা। আজকাল বিনা কারণে বাইরে বেরোলে মেয়ে চিন্তা করে। মায়ের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে, "বাবা আসছে না তো। ফোন করো। আমি করব?" প্রায় একঘন্টা আগে বেরিয়েছে। এঃ! চার্জ ফুরিয়ে গেছে। ফোন সুইচড অফ। এরা দলবদ্ধ। সে একা। এরা একে অন্যকে তাদের কষ্টগুলো শেয়ার করে। সে নিজের মনকে অনেক প্রশ্ন করে। তবে অপরিশিলীত মনের একটা অদ্ভুত দোষ আছে। নিজের ত্রুটিগুলো কখনোই ওপেন করতে পারে না। আর সকলের দোষত্রুটি, ভুলভ্রান্তির উপর ফোকাস করে।
মাছ ভাজার গন্ধ মেখে ডাবল-এক্স দরজা খুলে দেয়। "আজ কি ডাল ,মাছভাজা?"
"কোথায় ঘুরে এলে?বললাম প্রিমিয়াম নৌক্রি ডট কম সাবস্ক্রাইব কর। ওখানে আরও ভাল অফার আছে। "
"আরও ভালোর কোনও শেষ নেই। একটা ধর্ণা মঞ্চে গেছিলাম। এমনি। সেক্টর থ্রির কাছাকাছি। "
"আমরা দু'মাসেই কেমন মুষড়ে পড়েছি। আর ওদের কথা চিন্তা কর!"
"অনেকে জমিজমা বিক্রি করে চাকরি কিনেছিল। আসলে ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ডের চাকরি একটা ক্রেজ। কত মাইনে বলো তো! আর আমাদের? 'ন' ঘন্টা কাজ। স্যালারি বাড়াতে বললে ওদের চুলকানি হয়। "
"সেইজন্য তো বলছি একটু ভালো অফারগুলো ট্রাই কর।"
"ধুসস...আর ভাল লাগে না। মা কতবার বলেছিল, 'এস.এস.সি. তে অ্যাপিয়ার কর। করলেই হয়ে যাবে । পারবি তুই। ' আমি তখন যাদু নগরীর প্রেমে মজে আছি। ব্রিটিশ টেলিকমের কাজ!"
এই ভদ্রমহিলা রোজকার রান্নার ভ্লগে কীসব আনসান বলে যায়! কত মানুষ খেতে পায় না। খাবার জুটছে না। কত মানুষ আর না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। শুধু কি এখানে!গাজার ছবিগুলো দেখলে মনটা কেমন হয়ে যায়। ছোটটাকে জড়িয়ে ধরে। বড়টা স্কুল থেকে ফেরার অনেক আগে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকে। পাশের গুমটিতে পাঁচ টাকার চা পাওয়া যায়। আর গাজায় শেষপর্যন্ত ফেমিন ডিক্লেয়ার করল জাতিসংঘ!
বড় মেয়ের হাতটা শক্ত করে ধরে রাস্তা পার হয় এক্সোয়াই। স্কুলের গল্প, বন্ধুদের গল্প বলতে বলতে তারা বাড়িতে পৌঁছয়। খেতে খেতে বড়টি বলে," বাবা খেয়েছে?"
"নিজের খাবার খেয়ে উঠে পড়। বোন ঘুমোচ্ছে । উঠে পড়লে মুশকিল। " ডাবল-এক্স বেডরুমের ঠাণ্ডায় ঢুকে পড়ে।
এক্সোয়াই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অর্ধেক তৈরি হওয়া বিল্ডিংটা দেখে। এমন প্রায়দিনই দেখতে থাকে। আগে এদিকটা পুরো ফাঁকা ছিল। কি সবুজ!সবুজে ছেয়ে ছিল। জংলা ঘাস। গাছ। নাম না জানা গাছ। গরু চরে বেড়াত। ফিঙে পাখিগুলি গরুর পিঠে চড়ে যেন বেড়াতে যাচ্ছে এমন মেজাজে বসে থাকতো। প্রায়ই তারা বেজি দেখতে পেত ওখানে। একবার শেয়াল দেখেছিল। তারপর একদিন সবুজ খুবলে খাবলে প্লিন্থ ঢালাই হল। বড়ো দ্রুত উঠছিল তারপর হঠাত একদিন বন্ধ হয়ে গেল কাজ। সেই সময় ব্যালকনিতে আসা যেত না। একটা বেডরুমের ওদিকের জানলা পুরো বন্ধ থাকত। কাজ থেমে যাওয়ায় ওদের জানলা,ব্যালকোনির দরজা সব খুলে গেল কিন্তু ছ্যাঁচড়ার মতো থমকে যাওয়া বিল্ডিংটা দাঁড়িয়ে থাকল হতভম্ব হয়ে।
(২)
কিছুক্ষণ আগে মেল ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছাড়ল। শূন্য ট্র্যাক। ইস্পাতের রেলের ওপর আলোর প্রতিসরণ। একটা বিরাট ইঁদুর ছুটে গেল এ ধার থেকে ও ধারে।
ওদিক থেকে জোলো হাওয়া আসছে শূন্য ট্র্যাক ছুঁয়ে। এরপর আরও অনেক ট্রেন আসবে। এক্সোয়াই বসে থাকে। কখনো ধীর পায়ে হেঁটে হেঁটে ওভারব্রিজ পেরিয়ে অন্য প্ল্যাটফর্মে যায়। সেখানে অপেক্ষা করে। কার জন্য এ অপেক্ষা?কেউ কি বলেছিল, আসবে?
আসা-যাওয়ার একটা মাঝামাঝি জায়গায় আটকে আছে এক্সোয়াই। ভেবেছিল কাজটা ছেড়ে দেবে। সপ্তাহের সবকটা দিন অপেক্ষা করবে তাদের জন্য। মিসেস তপাদার বোঝালেন, "কাজ ছেড়ে দিলে তোমার শূন্য মস্তিষ্ক আরও ছটফট করবে। তাছাড়া,তুমি তো বলেইছিলে, জব চাই। জব না করলে ওদের দেখাশুনো করবে কী করে... সুতরাং কাজে যাও।"
এক্সোয়াই সপ্তাহের ছয় দিন কাজ করে। স্যালারি জমছে। এসব তার সন্তানদের ভবিষ্যত গঠনে লাগবে। মিসেস তপাদারের কথামতো সে শুধু রবিবারকে বেছে নিয়েছে অপেক্ষা করার দিন হিসেবে। কোনও এক রবিবারেই তাদের পৌঁছনোর কথা ছিল এই শহরে। সেটাও এক স্বপ্ন। ও নিজেও স্বপ্ন দেখিয়েছিল, হিমালয়ের কাছাকাছি থাকলে মন বড় হয়। ভাবনাচিন্তার জগত বিস্তৃত হয়। এস। আয়।
আসলে আকর্ষণের একটা ব্যাপার আছে। মাধ্যাকর্ষণ সবকিছুকে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে টেনে আনে। এও অনেকটা তেমন। ওদিকের জোর বেশি। ওদিকের দাপট বেশি। এক্সোয়াই অযথা দাপট দেখাতে পারে না। কাউকে জোর করা তার স্বভাবে নেই। এটি সে জিন মার্ফত প্রাপ্ত হয়েছে। ও শুধু বুঝিয়ে বলতে পারে। তাই রবিবারগুলো তার আর মিসেস তপাদারের স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেই কেটে যায়। কোন কোন ট্রেনে আসতে পারে তার হিসেব করে নেওয়ার পর তারা অপেক্ষার সময়টুকুও নির্দিষ্ট করে নিয়েছে। সময় পেরিয়ে গেলে তারা ঘরে ফেরে। একটি অটো ঠিক করা আছে। ওতে চেপে তারা আসে। অটো চালক ঠিক সময়ে এসে ওদের পিক-আপ করে। চালকটিও এই কয়েক বছরে তাদের পারিবারিক বন্ধু হয়ে গেছে। কাজে যাওয়ার সময়ও ঐ অটোতেই যায় এক্সোয়াই। একবার ভেবেছিল একটা বাইক কেনা যেতেই পারে। শিক্ষা শেষে একটি লাইসেন্স তার দখলে আসতেই পারে। তরুণ বয়সে অনেক খতরনাক রাস্তায় বাইক চালিয়েছে ও। বন্ধুদের বাইক। সে অনেক দিন আগের কথা। শতাব্দী প্রাচীন গল্প না হলেও সেই বন্ধুরা ওকে ছেড়ে গেছে। ওর জগতটা ছোট হতে হতে মাত্র কয়েকজনকে নিয়ে। কাজের জগতের সঙ্গে এই জগতের অবশ্য অনেক ফারাক। সে এক বিস্তৃত জগত। বাইক আর কেনা হয়নি। পরে কখনও কেনা যেতেই পারে ভেবে একটা ক্লসেটে তুলে রেখেছে। ঐ ক্লসেটে জমা আছে, কী কী হতে পারে তার তালিকা। কী কী হবে তার স্বচ্ছ ভাবনা। অপেক্ষা শুধু, অপেক্ষার প্রহর শেষ হওয়া অব্দি।
জেনেটিক আকর্ষণ, হুঁ, এটাই বলে থাকেন মিসেস তপাদার। তা , সেই জেনেটিক আকর্ষণের যে অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা আছে একটি একদা হাসিখুশি আনন্দোচ্ছল পরিবারের সাড়ে সাতশ গ্রাম,সেই সুতোর প্রধান গিঁটটি ছিঁড়ে গেলেই এদিকে একটি তিনশ' ষাট ডিগ্রির কোণ তৈরি হয়ে যাবে। একটা বৃত্ত গড়ে উঠবে অনেকদিনের জমে থাকা বৃত্তান্ত নিয়ে। শুধু গিঁট ছেঁড়ার অপেক্ষা। এরকম অপেক্ষায়
থাকতে থাকতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রাউজ করে এক্সোয়াই। নেই। নেই। নেই। কোথায় কোথায় না খোঁজে !কেউ এভাবে বেপাত্তা হয়ে যেতে পারে!ফোন তো সেই কবে থেকে বলে চলেছে সুইচড অফ্।
যেদিন শেষ মেসেজ দেখেছিল, 'সময়মতো আসব'। ব্যস। সেই সময় কই আর হল সুতোর!
গিঁট ছিঁড়ে গেলে,তবে! একটা মৃত্যু! তাহলে কি ও মৃত্যু কামনা করছে সেই সুতো ধারকের! মাথা গোলমাল হয়ে যায়। "চলো, কিছু খেয়ে নেওয়া যাক। খালি পেটে অপেক্ষা করার কোনও মানে হয় না। "
ঠিক সেই মুহূর্তে মিসেস তপাদারকে খুব নিষ্ঠুর মনে হয়। তবে উনি ওসবের ধার ধারেন না। জীবন তাঁকে প্র্যাকটিকাল করে তুলেছে। প্যাকেটে করে রুটি আর আলুমটর নিয়ে আসেন আর তখন দেখতে পান এক্সোয়াই রীলস দেখছে।
আজ বেশি কিছু বানাইনি। এই যে নারকেল কোরা দিয়ে শোলা কচু বাটা। আর এই দেখ চিকেন করেছি। আজ আলু দিয়ে মাখো মাখো চিকেন কারি। আর এই যে ভাত। এক্সোয়াই ফোন বন্ধ করে। মন দিয়ে খেতে থাকে রুটি, আলুমটর, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা। ওর মুখে কোনোরকম অভিব্যক্তি নেই। খুব ক্ষিদে পেয়েছিল বোধহয়। "নেক্সট রবিবার নারকেল কোরা দিয়ে শোলা কচু বাটা খাব। গরম ভাত মেখে। "
মিসেস তপাদার ভাল করে দেখেন এক্সোয়াইয়ের মুখ। চোখ। চোখে মিটি মিটি হাসির ছায়া। তিনি ঠিক প্রামাণ্য পর্বে আসতে পারেন না। কোনটার ফিউজ গেল, মাথা না মন?
(৩)
এখন রাত এগারোটা। এক মা আর তার ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। চেনা পরিসরে। প্ল্যাটফর্ম গত কয়েক বছরে তাদের হাফ বাসস্থান হয়ে গেছে। "পরের রোববার গরম ভাত আর নারকেল কোরা দিয়ে শোলা কচু বাটা। "শিস দিতে দিতে হাওড়া থেকে এসে পৌঁছনো এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে থাকে এক্সোয়াই।
Comments
Post a Comment