বোধ | অম্বরীশ ঘোষ | অণুগল্প ১২
শহর না বলে শহরতলি বলা যেতে পারে বিলাসপুরকে। এখানকার অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর মধ্যে গিরিন একজন। সন্ধে ঘনালে ছোট্ট একটা ব্যাগ হাতে করে ঘরে ফেরে গিরিন। এই দৃশ্যটা সুপরিচিত। এমনই এক গ্রীষ্ম পেরোনো সন্ধ্যায় ঘরে ফিরছিল গিরিন। হঠাৎ শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। একটা বন্ধ দোকান ঘরের কাঠের বারান্দায় দাঁড়িয়ে পড়লো গিরিন। নাহ্, বৃষ্টি থেমে যাওয়া পর্যন্ত আশ্রয়টা মন্দ নয়! কিন্তু মিনিট খানেক বাদেই এই সুন্দর ভাবনা টাতে একটা ধাক্কা পড়লো। একটা পূর্ণবয়স্ক গরু এগিয়ে আসছে এই আশ্রয়ে। ভয় পেয়ে গিরিন হ্যাট্ হ্যাট্ শব্দে তাড়াতে লাগলো গরুটাকে। কিন্তু লাভ হলো না কিছুই। গরুটা এসে দাঁড়ালো বারান্দার ছাউনির নিচেই। গরুটা গা ঝাড়া দিয়ে একটু ঝরঝরে হয়ে নিল। তারপর গিরিনের গা ঘেঁষেই দাঁড়ালো প্রায়। বিপদ নেই বুঝে গিরিনও তেমন একটা সরে দাঁড়ালো না। ক্ষণিক বাদে গরুর লেজের বাড়ি লাগলো পায়ে। গিরিন সামান্য একটু সরে এসে দাঁড়ালো। নাহ্, এখানেও লেজের মৃদু বাড়ি লাগছে পায়ে। একটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করল বিষয়টা। অবাক হয়ে গেল গিরিন। গরুটা নিজের শরীরে বসা মশা তাড়াচ্ছে লেজ দিয়ে। পাশাপাশি গিরিনের শরীরে বসা মশাদেরও তাড়িয়ে দিচ্ছে। গিরিনের মনটা লজ্জা, কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসার এক মিশ্র আবহে হু হু করে উঠলো। ও পর ভেবে গরুটাকে ঢুকতে দেয়নি। অথচ গরুটা ওকে আপন ভেবে ওর শরীরের মশা তাড়িয়ে দিচ্ছে। মনে মনে ক্ষমাপ্রার্থনা করে নিল গিরিন। তারপর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার অনুভূতি মেশানো হাতটা রাখলো গরুটার পিঠে।
Comments
Post a Comment