তমোহন উত্তরবঙ্গের অন্যতম ভারত সরকারের পি.আর.জি.আই কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বার্ষিক গবেষণামূলক মুদ্রিত পত্রিকা। পাশাপাশি লেখক-পাঠকদের অনুরোধে অনলাইন ডিজিটাল ওয়েবপত্র হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ। সারাবছর জুড়ে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্ত থেকে তমোহনে লিখতে ও পড়তে পারবেন; পাশাপাশি দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে তমোহন ক্রয় করতে পারবেন। আপডেট পেতে আমাদের সাথে সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটে যুক্ত থাকুন। প্রকাশিত সংখ্যার বিবরণ : ১. (২০২৩-২৪) : তমোহন, ময়নাগুড়ির ইতিহাস, প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, নভেম্বর ২০২৩, ২. (২০২৪-২৫) : তমোহন, সাহিত্য ও ইতিহাসের পাতায় উত্তরবঙ্গ, দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২৫

অভিমান, অপ্রাপ্তি ও আন্দোলন | নীলাভ্র দে সরকার | প্রবন্ধ ১১

নায়ক এর নাম গোপেন, নিম্নবিত্ত পরিবারের  একমাত্র চাকুরেজীবী। গান্ধীজির 'ইংরেজ ভারত ছাড়ো' আন্দোলনে চাকরি হারিয়েছে, আর্থিক অনটনে জীবনের প্রতি উদাসীন। সাদাভাতে নুন হলো কিনা তাতে তার আগ্রহ নেই শুধু ঐ দু মুঠো অন্ন হলেই হল। বউ পিটিয়ে পুত্র, কন্যাকে গালমন্দ করে অভাবে অভিযোগে তার দিন কেটে যায়। বহির্বিশ্বে হিটলার নরসংহার করলেন কিমবা আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের ফাঁসির হুকুম হলো তাতে তার আগ্রহ নেই। স্বাধীনতার সংগ্রামীদের দেখে সে বিদ্রুপ করে― "স্বাধীন ভারতের দল খুব তরপাই চালাচ্ছে চালাক। কারও বাপের পয়সা আছে কেউ বেকার। করো তোমরা ভারত স্বাধীন করো আমাকে তোমরা বাদ দাও।" পর্যায়ক্রমে একদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরবার পথে তার শুকতল ক্ষয়ে যাওয়া জুতোয় সে শহীদের রক্ত মাড়িয়ে হেঁটে যায়, অতর্কিতে হয় ভাইরাসের আক্রমণ সংক্রমিত হয়ে পড়েন গোপেন বাবু, একেবারে জাতীয়বাদের ভাইরাস। গোপেনবাবু আন্দোলনে সামিল হোয়ে পড়েন যেখানে যেখানে বিপ্লব হচ্ছে, মানুষ পুলিশকে লক্ষ্য কোরে পাথর ছুঁড়ছে তিনি সমস্ত জায়গায় সামিল হন ভূত ভবিষ্যৎ না ভেবে। তার অর্থকষ্ট, মনোকষ্ট, খাদ্যাভাব সমস্ত প্রতিকূলতাকে গোপেন আন্দোলনের আগ্রাসনে আহুতি দেন।

উপন্যাসে পর্যায়ক্রম আমরা দেখতে পাই কংগ্রেস নেতারা আন্দোলন থামাবার ডাক দিলে গোপেন তথা তার সন্তানদ্বয় মুষড়ে পড়েন যেনো জীবনের সংগ্রামটা চলে গেলো আবার সেই একঘেয়েমী নিস্তরঙ্গ জীবন। তারাশঙ্করবাবুর কলমে "জীবনের তার খুব টেনে বেঁধেছিল ওরা হঠাৎ তা আলগা হয়ে যায়" তাদের সমস্ত সঞ্চিত জীবনশক্তি আগ্রাসন যা তাঁরা সোপে দিয়েছিলো তা মুহূর্তের অসাবধানতায় নস্যাৎ হয়ে যায়। এ গেলো তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস 'ঝড় ও ঝরাপাতা' -র প্রসঙ্গ এবার আমরা আসি মূল সামাজিক প্রেক্ষাপটে। সমান্তরালে আমরা রাখবো পশ্চিম বঙ্গের বুকে ২০২৪ এর কাদম্বিনী আন্দোলন। বঙ্গবাসী কেনো আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিলেন জানেন? তাদের প্রয়োজন ছিল একঘেয়েমির থেকে সাময়িক মূক্তি। পানসে নিস্তরঙ্গ অনুভূতিহীন জীবনে সাময়িক উত্তেজনা। কেউ হাজারটা অপ্রাপ্তির বোঝা কাধে চাপিয়ে সংগ্রামে নেমেছিলো কেউ বিশ্ব দরবারে নিজের নাম ছড়িয়ে দিতে সংগ্রামে নেমেছিলো কেউবা নেমেছিলেন প্রেমিকাকে Impress করতে কেউ বৈবাহিক জীবনের অশান্তির আগ্রাসন ক্ষোভ তাপ অপ্রাপ্তির থেকে মুক্তি পেতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। প্রত্যেকেই আন্দোলনে নেমেছিলেন নিজেদের অভাব অভিযোগ অপ্রাপ্তির যন্ত্রণাকে সামাজিক স্তরে ফুটিয়ে তুলতে। সাময়িকভাবে নিজের না পাওয়া গুলোকে ভুলিয়ে গণ অভ্যুত্থানে সামিল হতে। কাদম্বিনী ধর্ষীত হলো না তিলোত্তমা ধর্ষিত হলো কিমবা ল কলেজের আইনের ছাত্রী গণধর্ষিত হলো তাতে বঙ্গবাসীর, ভারতবাসীর কিছু এসে যায় না কিছুই না যদি তেমন হতো তবে মাননীয়া এবার উৎসবে ফিরে এসো বলতেই বঙ্গবাসী ড্যাং ড্যাং করে উৎসবে সামিল হতে পারতেন না। যদি সত্যি যেয়ে আসতো দীপাবলীতে ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বলতোনা আলোকসজ্জার আতিশয্যে রোষনাই এ স্থল অম্বর ভেসে যেতোনা। শুনতে কটু হলেও এটাও সত্যিই যে কাদম্বিনী ছিলো বঙ্গবাসীর কাছে তাদের ক্ষোভ তাপ দুঃখ অভিমানকে কে ভুলিয়ে একঘেয়েমি দূর করার পন্থা মাত্র। একজন কাদম্বিনী ধর্ষীত হল নাকি একশোজন তাতে এই সমাজ ব্যবস্থার এই বিশ্ব ব্যবস্থার কিছুমাত্র এসে যায় না! এই পৃথিবী আবর্তকারে ভুরে চলেছে দিনের পর রাত রাতের পর দিন সেই গতি রোধ করে কার সাধ্য!

জয় যে বঙ্গবাসীর হয়নি তা নয় তারা জয়ী হয়েছেন বাঙালি পেরেছে তার একঘেয়েমি কে কাটিয়ে ব্যস্ততায় ফিরে যেতে সমস্ত বাধানিষেধকে টপকে উৎসবে ফিরে যেতে জীবনের স্রোতে ফিরে যেতে এই জয়ই বা কম কি নাই বা হলো ফরাসি বিপ্লব বাংলার বুকে দু দুবার নবজাগরণ সাজেনা। ৩৬৫ -টি দিন পেরিয়ে গেলো কাদম্বিনী বিচার পায়নি। পায়নি যে তাতে কি পৃথিবীর আন্হিক গতি থেমে গেছে? না শীতকালে ৪২⁰ ডিগ্রীর উষ্ণতা অনুভূত হয়েছে হয়নি তো সমস্তটা আগেরমতই আছে। অমেরুদন্ডী প্রাণীরা গুহায় সেধিয়ে গেছে, সরীসৃপরা Aestivation এ মত্ত কিচ্ছু বদলায়নি আর বদলাবেও না সমাজ তার অবস্থান থেকে সরে আসবেনা এ বিশ্ব কখনোই শিশুর বাসযোগ্য হয়ে উঠবেনা যদি আপনি স্বপ্ন দেখে থাকেন নতুন ভোরের মুছে ফেলুন সেই স্বপ্ন সমস্তকিছু মিথ্যা আপনি মিথ্যার স্বর্গে বাস করছেন। 

বিঃ দ্রঃ বক্তব্যের কিছু অংশ চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর সাহিত্য আলোচনা হইতে গৃহীত তথা অনুপ্রাণিত।

Comments

Popular Posts

Tamohan, Govt. of India Registration Number (PRGI) WBBEN/25/A1160, New Genaration Acclaimed Bengali Literary Research Journal (Language, Literature & Cultural Studies) & Independent Publication. Maynaguri, Jalpaiguri, West Bengal, India. Estd. 2023.