আড্ডা নিয়ে যত কথা | শুভময় সরকার | পর্ব ৪ | ফিচার ১
ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসের দিনগুলোতে আমাদের মুখে মুখে একটি ছড়া ঘুরতো, লিখেছিল আমাদের কবিবন্ধু অচ্যুত ভট্টাচার্য। এখনও দিব্য মনে আছে লাইনগুলো―
'আড্ডা দিতেন রবীন্দ্রনাথ,
আড্ডা দিতেন নজরুল
আড্ডা দিয়েই মহান হলেন
দেশের যত কবিরকুল'
শুধু এটাই নয়, এরকম আরও বেশ কিছু লাইন তখন আমাদের সারাক্ষণের সঙ্গী। কিছু কিছু বেশ মনে আছে আজও। আসলে আমার জীবনে,আরেকটু বিশদে বললে বলা যায় আমাদের জীবনে, (হ্যাঁ, গৌরবে বহুবচন) ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস এক আজন্ম অনুষঙ্গের মতো কাজ করে চলেছে আজও। আমার এই আড্ডাবেলায় নানা ভাবে ফিরে ফিরে সেই ক্যাম্পাস যাপনের দিনগুলি-রাতগুলি ফিরে ফিরে আসাটা অনিবার্য।
যে সময়টার কথা বলছি, সেটা সদ্য ক্যাম্পাসের শুরুর দিনগুলো। সদ্য এসেছি বহুশ্রুত উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। এই ক্যাম্পাসে যারা আসেনি বা থাকেনি, তারা এর অমোঘ টান ঠিকঠাক অনুভব করতে পারবে না। ভারতবর্ষের অন্যতম এক বড় ক্যাম্পাস বলেই যে এর আকর্ষণ, তা নয়। প্রকৃতির মাঝে অদ্ভুত সুন্দর এই ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে দূরে তিনধারিয়া আর কার্সিয়াং পাহাড়ের আলো দেখতে দেখতে হারিয়ে যাওয়া তো অন্য কোথাও সম্ভব নয়, কিংবা ক্যাম্পাসের মাঝখান দিয়ে তির তির করে বয়ে চলা মাগুরমারি তো এই বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যাবে না। এতটা ব্যক্তিগত অনুভূতিতে অনুষঙ্গ হয়ে ওঠা ক্যাম্পাসের নেশাতুর সময়ের শুরু সেটা। ততোদিনে আমার ডেরা আর.কে. হস্টেলের নর্থ ফিফটি, যে রুমের বাইরে লেখা ' Bub's cott.', অর্থাৎ বুবুনস কটেজ। আমার সিনিয়র সুবীর চক্রবর্তীর ডাক নাম বুবুন এবং তা থেকেই বুবুন'স কটেজ। পরবর্তী সময়ে অবশ্য এই রুমের নামকরণ হয়েছিল 'নষ্টনীড়'।
প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে 'টপ ফ্লোর'-এ রুম এলোটেড হওয়ার কথা নয় কিন্তু হলো। এ নিয়ে দু'একজন মজা করে প্রশ্ন তোলাতে সিনিয়রদের তরফে বলা হয়েছিল - কারো কারো ক্ষেত্রে হয়, এক্ষেত্রেও হলো, ইজ দ্যাট ক্লিয়ার এনাফ…? আসলে গল্পটা অন্য জায়গায়। এই সিনিয়ররা নতুন সেশন শুরুর আগেই খোঁজ পেয়ে যেতো তেনাদের উত্তরসূরিদেরদের। আমি সম্ভবত সেই আড্ডাবাজ গ্রুপের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে ছিলাম। কলেজ পেরোনোর পর ইউনিভার্সিটি আমার অনন্ত আড্ডাবাজির জীবনে এক নবতর অধ্যায় কারণ সেই আড্ডাবাজির ঘেরাটোপে আজও রয়েছি, ‘নষ্টনীড়’'-এর হ্যাংওভার আজও কাটেনি। বলি তাহলে সে-সব দিনের গল্প…
Comments
Post a Comment