ও আমার সোনা গো | ঋষিগোপাল মণ্ডল | রম্যরচনা ৫
বাচাল, ওপরচালাক, পাল্টিবাজ, ক্ষমতালিপ্সু এবং হরওয়ক্ত শো-অফ করা এই সময়ে সোনার দর বাড়তে বাড়তে বিবাহযোগ্য মেয়ের বাপের আয়ু কমিয়ে দিচ্ছে। লকডাউনের কাছাকাছি সময়ে অনেক মানুষ দু'বেলা ভালো করে খেতে পাচ্ছিল না। এই সময়েই অনেক মানুষ ধনতেরাসে লাইন দিয়ে সোনা কিনেছে। লাইন ও বাঙালি যখন ছিল, বেলাইনও করেছে নিশ্চিত। এই সময় এলেবেলে একটা বাবা, কিছুটা ঝুঁকে পড়া, মেয়ের বিয়ে দিতে হবে বলে আসলে আরও ঝুঁকে যাওয়া একটা বাবা বলছিলেন, আমাদের ঘরে কত আর সোনা থাকবে বলুন! অথচ অপার্থিব সিনেমায়, বাস্তবের অপাদের ফ্ল্যাটে তাল তাল সোনা থাকে। সোনার বিস্কুট। সোনার ইট। অপাদের পরিশ্রমের সোনা। পাবলিক পরিশ্রম করে না, শুধু ফেসবুক করে। অপাদের ফ্ল্যাটে টাকা-সোনা-গয়নার সাথে পাওয়া অ্যাডাল্ট-টয় দুটো কল্পনা করেই নড়ে যায়; পাবলিকের মনোযোগ। দুর্নীতির প্রতিবাদের ফোকাস।
গোল্ড ডিগারের অর্থ যদি স্বর্ণ খননকারী হয়, তবে সেই খননকারীদের লিঙ্গ শুধু 'স্ত্রী' হয় কেন ভাবতে ভাবতে মনে হলো, বৌকে কত যুগ আদর করে 'সোনা' বলে ডাকা হয়নি। রুপোর কৌটো থেকে এক চুটকি সিঁদুর পরার সময়, বিশ্বাস করো রমেশবাবু, তাকে সোনা বলে ডাকতে ইচ্ছে করে। কারণ তোমরা তো জানোই, কৌটোর ভিতরে আছে যুগপৎ প্রাণ ও ভোমরা। আর আমার রঙের কালো তো ভ্রমরসমানই বলো! যে গরুর দুধে সোনা পাওয়া গিয়েছিল, না! তার নাম কাজলী ছিল না। কাজলীর যেবার এড়ে বাছুর হলো আমাদের গোয়াল ঘর অন্ধকার হয়ে গেল হতাশায়। অথচ দ্যাখো, মানুষের এড়ে বাচ্চা হলে কি খুশিয়াল হয়ে ওঠে ঘরদোর। নার্সিংহোম। সরকারি হাসপাতাল। আয়াদের মুখ। তিন বছর পর কাজলী বকনা বাছুর বিয়োতেই সে কি খুশির রঙ গবাক্ষে! একটা গোয়ালা এসে কাজলীর বকনা বাছুর নিয়ে গেল। লোকটার পদবী ঘোষ। নাম, যদ্দূর মনে পড়ে, দিলীপ। পরে, খবরে দেখলাম, ওই বকনা ক্রমে গাভী হলে ওর দুধেই সোনা মিলেছে।
তখন এক দল গাইছিল "ও মেরি সোনা রে সোনা রে সোনা।" আর এক দল গাইছিল "মেরি সোনা তু।" ফেবুর অধিকাংশ বাঙালি পাবলিক যেহেতু সেকু , তাই তারা গাইছিল , "ও আকাশ সোনা সোনা।" পাঁচলা দেউলপুর গ্রামের এক চিলতে টালির চালের বাড়ি। মা পূর্ণিমা শিউলি , বড় ভাই অলোক শিউলি। ওই বাড়ির একটা ছেলে ; নাম অচিন্ত্য শিউলি। শিউলির মরশুম আসার আগেই শিউলির অচিন্তনীয় সাফল্যের সোনা ঝকঝক করে ওঠে বাংলায়।
অভাবী সংসার। বাবা ভ্যান চালাতেন। অর্থের অভাবে আধপেট , হাফবেলা খেয়ে দিন কাটত তাঁদের। ছোটবেলাতেই হঠাৎ বাবার মৃত্যু। পরিবারে অন্ধকার। মা পূর্ণিমা দেবী দুই ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে জরির কাজ করে কোন রকমে সংসার টানতে থাকেন। বাবার মৃতদেহ দাহ করার সামর্থ্য ছিলনা অচিন্ত্যদের। তারপর অচিন্ত্যর হাত ধরে একটা গোটা দেশ সোনা জেতে। জিতে মাথা তুলে পুরস্কার মঞ্চে এক নওজোয়ান সিনা টানটান দাঁড়ালে গমগম বেজে ওঠে জনগণমন। শুধু অচিন্ত্যর জন্যই। সব সোনা সমান হয় না মোনা ডার্লিং।
Comments
Post a Comment