ফিরে পাওয়া জীবনে: নতুন এডভেঞ্চারের খোঁজে | বাবলু সাহা | পর্ব ২
যেতে যেতে আমার বিকেল হয়ে গেল। প্রসঙ্গত এখানে জানিয়ে রাখি যে, এই সান্দাকফু-ফালুট ট্রেক রুটের প্রায় যত দিক দিয়ে যতরকম অচেনা রাস্তা বা পথ আছে, তারমধ্যে অধিকাংশ রুট বা রাস্তায় এরআগে আমার যাওয়া হয়ে গেছে। ফলে বারংবার এই রুটের বিভিন্ন দিক দিয়ে যেতে গিয়ে, সেইসব এলাকার গাইড থেকে গ্রাম্য পাহাড়ী মানুষজনের খুবই পরিচিত একজন বন্ধু বা আপনজন হয়ে উঠেছিলাম (আজও তাইই আছি), সেকারণে তাদের কাছের মানুষ হিসেবে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। গতানুগতিক একঘেয়ে বহুপ্রচলিত পথ ছেড়ে, নিত্যনতুন স্বল্পচেনা পথে ট্রেক করার মজা বা আনন্দও আরও দ্বিগুণ হয়েছে। এবং এসব সফল হয়েছে কারণ, প্রতিবারই আমি সাথে কোনও না কোন প্রশিক্ষিত এবং কর্মঠ গাইড এর সাহচর্য লাভ করেছি। চলার পথে যাদের অবদান অনস্বীকার্য।
আমি হঠাৎ গিয়ে ওর পথরোধ করে দাঁড়ালাম, ও বাধা পেয়ে মুখ তুলে তাকিয়েই আমাকে দেখে একগাল হাসি, তারপর করমর্দন। প্রথম যেবার আমি (সাথে আরও দুটি ভাই ছিল) মানেভঞ্জন থেকে সন্দাকফু-ফালুটের পুরোটা রাস্তা ট্রেক করে নামি, সেবার এই ডম্বরই ছিল আমাদের নামকরা প্রশিক্ষিত গাইডদের মধ্যে একজন। ট্রেক শেষ হওয়ার পর আরও বহুবার গিয়েছি এখানে, প্রত্যেকবারই আমি ওর সাথে দেখা না করে যাইনি। এখন তো ডম্বর নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। ওরসাথে বেশকিছুটা সময় গল্প করে, আমি এগোলাম সামনের বৌদ্ধ গুম্ফার দিকে। গুম্ফার অলিন্দে কিছুক্ষণ পায়চারি করে আমি রাস্তার পাশের একটি নেপালি খাবারের দোকানে ঢুকে এক প্লেট থুকপা খেয়ে ফিরে চললাম আমার ঘরে।
তারপর সেখান থেকে সান্দাকফু-ফালুট হয়ে আরও উচ্চতায় সিঙ্গলিলা পাস অতিক্রম। সেকারণে হাতে অনেকটা সময় নিয়েই এসেছিলাম। কিন্তু তখন কী জানতাম যে, যা ভাবা যায়, তা সবসময় হয়না ! কিন্তু যেটা হয়, সেটাও আগাম পরিকল্পনা মাফিক হয়না; সেসব ঘটনা মনের মণিকোঠায় রয়ে যায় স্বপ্নের রূপকথা হয়ে। এরমধ্যে আমার দুপাশের ঘরে দুটি আলাদা দল এসেছে, তাদের মধ্যে একদল যাবে প্রচলিত পথে পায়ে হেঁটে সান্দাকফু, আরেকদল যাবে গাড়িতে অর্থাৎ রিসার্ভ করা জীপে সারাটা পথ নাচতে নাচতে ওই সান্দাকফু। তাদের সাথে আলাপ হলো এবং ওরা ওদের যাওয়ার কথা সগর্বে ঘোষণা করে যে যার ঘরে ঢুকে গেল। একটু পরেই পাশের ঘর থেকে শুনতে পেলাম, আমাকে কেন্দ্র করে বেশ বিদ্রুপ আর হাসাহাসি চলছে।
Comments
Post a Comment