তমোহন উত্তরবঙ্গের অন্যতম ভারত সরকারের পি.আর.জি.আই কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বার্ষিক গবেষণামূলক মুদ্রিত পত্রিকা। পাশাপাশি লেখক-পাঠকদের অনুরোধে অনলাইন ডিজিটাল ওয়েবপত্র হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ। সারাবছর জুড়ে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্ত থেকে তমোহনে লিখতে ও পড়তে পারবেন; পাশাপাশি দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে তমোহন ক্রয় করতে পারবেন। আপডেট পেতে আমাদের সাথে সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটে যুক্ত থাকুন। প্রকাশিত সংখ্যার বিবরণ : ১. (২০২৩-২৪) : তমোহন, ময়নাগুড়ির ইতিহাস, প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, নভেম্বর ২০২৩, ২. (২০২৪-২৫) : তমোহন, সাহিত্য ও ইতিহাসের পাতায় উত্তরবঙ্গ, দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২৫

ফিরে পাওয়া জীবনে: নতুন এডভেঞ্চারের খোঁজে | বাবলু সাহা | পর্ব ২


যেতে যেতে আমার বিকেল হয়ে গেল। প্রসঙ্গত এখানে জানিয়ে রাখি যে, এই সান্দাকফু-ফালুট ট্রেক রুটের প্রায় যত দিক দিয়ে যতরকম অচেনা রাস্তা বা পথ আছে, তারমধ্যে অধিকাংশ রুট বা রাস্তায় এরআগে আমার যাওয়া হয়ে গেছে। ফলে বারংবার এই রুটের বিভিন্ন দিক দিয়ে যেতে গিয়ে, সেইসব এলাকার গাইড থেকে গ্রাম্য পাহাড়ী মানুষজনের খুবই পরিচিত একজন বন্ধু বা আপনজন হয়ে উঠেছিলাম (আজও তাইই আছি), সেকারণে তাদের কাছের মানুষ হিসেবে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে।  গতানুগতিক একঘেয়ে বহুপ্রচলিত পথ ছেড়ে, নিত্যনতুন স্বল্পচেনা পথে ট্রেক করার মজা বা আনন্দও আরও দ্বিগুণ হয়েছে। এবং এসব সফল হয়েছে কারণ, প্রতিবারই  আমি সাথে কোনও না কোন প্রশিক্ষিত এবং কর্মঠ গাইড এর সাহচর্য লাভ করেছি। চলার পথে যাদের অবদান অনস্বীকার্য।

যাইহোক, মানেভঞ্জনে নেমেই ভারী স্যাকটি পিঠে তুলে নিয়ে আমি সোজা এখানে এলেই আমার বরাবরের থাকার জায়গা এবং তৎসহ ঘনিষ্ঠ বন্ধু জীবন ছেত্রী(জীবন স্যার বা মাস্টারজী) ডেরায়। জীবনদা স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক, পুলিশে ট্রেনিং নিয়ে চাকরি পেয়েছিলেন, কিন্তু সে চাকরি করেননি।  মানেভঞ্জন এর ইয়ুথ হোস্টেল ও জীবন স্যারের ঘর লিজ নেওয়া। পোস্টাফিসের ডাকবাক্সের পাশের সরু সিঁড়ি ধরে উপরে উঠেই ডানদিকে জীবনদার ছোট্ট নতুন অফিসঘর। সেখানে দেখলাম কেউ নেই। শেষে দরজা খুলে করিডর পাড় হয়ে জোরে হাঁক পাড়তেই জীবনদা বেরিয়ে এসে আমাকে দেখেই কাছে এসে জড়িয়ে ধরলেন, শিবানী বৌদি তার দুই ছেলে - মেয়ে নিয়ে সেসময় দার্জিলিং মোড়ের বাড়িতে।

এবারে কোথায় কোন পথে যাওয়া ঠিক করে এসেছি সবার আগে সেটা জানতে চাইলেন, কারণ জীবনদা ভালোমতোই জানে  যে, প্রচলিত পথে সান্দাকফু যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমি এখানে আসিনি, সেই বুঝে উনি আমার জন্য গাইড ঠিক করে দেবেন। এবং বলে দিলেন, রাতে শুয়োরের মাংস উনি নিজেই রান্না করবেন, আমাদের আরও দুজন পরিচিত লজ বা হোমস্টের (সামানদেন) মালিক আসছে, সবাই একসাথে রাতের ডিনার খাবো। শুনে তো ভীষণই খুশি আমি। এরপর আমি আমার ব্যক্তিগত ঘরে গিয়ে স্যক পিঠ থেকে নামিয়ে নিচের রাস্তায় নেমে এলাম। দশ হাত দূরেই নেপাল বর্ডার পুলিশের এলাকা হলেও যাতায়াত করার সময় বোঝা যায়না হঠাৎ। রাস্তার বাঁদিক ধরে এগিয়ে চললাম আমার আর এক পুরাতন বিশ্বস্ত সঙ্গী নামী গাইড বন্ধু ভাই ডম্বর সুব্বার সাথে দেখা করতে। আসলে এখানে পরিচিত কাউকেই আমি আসার আগে জানাইনি। খানিকটা এগোতেই দেখি  ডম্বর নিজের মনে হাঁটতে হাঁটতে আমার দিকেই আসছে।

    আমি হঠাৎ গিয়ে ওর পথরোধ করে দাঁড়ালাম, ও বাধা পেয়ে মুখ তুলে তাকিয়েই আমাকে দেখে একগাল হাসি, তারপর করমর্দন। প্রথম যেবার আমি (সাথে আরও দুটি ভাই ছিল) মানেভঞ্জন থেকে সন্দাকফু-ফালুটের পুরোটা রাস্তা ট্রেক করে নামি, সেবার এই ডম্বরই ছিল আমাদের নামকরা প্রশিক্ষিত গাইডদের মধ্যে একজন। ট্রেক শেষ হওয়ার পর আরও বহুবার গিয়েছি এখানে, প্রত্যেকবারই আমি ওর সাথে দেখা না করে যাইনি। এখন তো  ডম্বর নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। ওরসাথে বেশকিছুটা সময় গল্প করে, আমি এগোলাম সামনের বৌদ্ধ গুম্ফার দিকে। গুম্ফার অলিন্দে কিছুক্ষণ পায়চারি করে আমি রাস্তার পাশের একটি নেপালি খাবারের দোকানে ঢুকে এক প্লেট থুকপা খেয়ে ফিরে চললাম আমার ঘরে।

সন্ধ্যায় জীবনদা এলো আমার ঘরে, সাথে একজন ছেলেকে নিয়ে, আমার সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো, সে ই আমার এবারের চলার পথের সঙ্গী গাইড পিটার রাই। সে থাকে জীবনদার ঘরের ঠিক পাশেই। হাইট আমার চাইতে কিছুটা ছোট, বয়সে তরুণ এবং বেশ শক্তপোক্ত চেহারা। তাকে বললাম আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য এবং নতুন পথের গন্তব্যের কথা। পিটার সব শুনে আমাকে আগামীকাল সকালে তৈরী হয়ে থাকতে বললো। আমার যাওয়ার কথা প্রথমে ইলামবাজার, সেখানে রাত কাটিয়ে পরদিন থেকে আমাদের হাঁটা শুরু। আমার লক্ষ্য ছিল পূর্ব নেপালের  ছিন্ন্তাফু, যেটি সান্দাকফু থেকে উচ্চতায় সামান্য কম হলেও পথ খানিকটা দুর্গম এবং এখান থেকেও একই দৃশ্য আরও ভালোভাবে দেখা যায়।

    তারপর সেখান থেকে সান্দাকফু-ফালুট হয়ে আরও উচ্চতায় সিঙ্গলিলা পাস অতিক্রম। সেকারণে হাতে অনেকটা সময় নিয়েই এসেছিলাম। কিন্তু তখন কী জানতাম যে, যা ভাবা যায়, তা সবসময় হয়না ! কিন্তু যেটা হয়, সেটাও আগাম পরিকল্পনা মাফিক হয়না; সেসব ঘটনা মনের মণিকোঠায় রয়ে যায় স্বপ্নের রূপকথা হয়ে। এরমধ্যে আমার দুপাশের ঘরে দুটি আলাদা দল এসেছে, তাদের মধ্যে একদল যাবে প্রচলিত পথে পায়ে হেঁটে সান্দাকফু, আরেকদল যাবে গাড়িতে অর্থাৎ রিসার্ভ করা জীপে সারাটা পথ নাচতে নাচতে ওই সান্দাকফু। তাদের সাথে আলাপ হলো এবং ওরা ওদের যাওয়ার কথা সগর্বে ঘোষণা করে যে যার ঘরে ঢুকে গেল। একটু পরেই পাশের ঘর থেকে শুনতে পেলাম, আমাকে কেন্দ্র করে বেশ বিদ্রুপ আর হাসাহাসি চলছে। 

Comments

Popular Posts

Tamohan, Govt. of India Registration Number (PRGI) WBBEN/25/A1160, New Genaration Acclaimed Bengali Literary Research Journal (Language, Literature & Cultural Studies) & Independent Publication. Maynaguri, Jalpaiguri, West Bengal, India. Estd. 2023.