তমোহন উত্তরবঙ্গের অন্যতম ভারত সরকারের পি.আর.জি.আই কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বার্ষিক গবেষণামূলক মুদ্রিত পত্রিকা। পাশাপাশি লেখক-পাঠকদের অনুরোধে অনলাইন ডিজিটাল ওয়েবপত্র হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ। সারাবছর জুড়ে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্ত থেকে তমোহনে লিখতে ও পড়তে পারবেন; পাশাপাশি দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে তমোহন ক্রয় করতে পারবেন। আপডেট পেতে আমাদের সাথে সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটে যুক্ত থাকুন। প্রকাশিত সংখ্যার বিবরণ : ১. (২০২৩-২৪) : তমোহন, ময়নাগুড়ির ইতিহাস, প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, নভেম্বর ২০২৩, ২. (২০২৪-২৫) : তমোহন, সাহিত্য ও ইতিহাসের পাতায় উত্তরবঙ্গ, দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২৫

পাপী পেট | ঋষিগোপাল মণ্ডল | রম্যরচনা ৪


মোটা পেট বা পেটমোটারোগা পেট বা পেটরোগাপাতলা পেট বা পেটপাতলা ইত্যাদি হরেক কিসিমের পেটের কথা শোনা গেলেও সবেচেয়ে খতরনাক হলো পাপী পেট। পাপী পেট কে লিয়ে মানুষ কত্ত কী যে করে জীবনভর।

যাদের পেটে পেটে অনেক কিছু আছে তারা সাধারণত শুটকি পেট হয়; লাগানভাজান, কুচুটেপনাঈর্ষাকাঠিবাজিগ্যাসঅম্বলবদহজমচোঁয়া ঢেঁকুরকোষ্ঠকাঠিন্যবুক জ্বালাপিত্তরোগ থাকলে কখনই ভুঁড়ি হয়না। সোজা কোথায় পেট বেরিয়ে আসে। কিছুদিন কোদাইকানালে কন্ডাক্টরি করতাম। লোকাল বাসের। সেই সময় তিন হাত ভিতরে ঢোকা পেটের এক কবিরাজ আমায় একথা বলেছিলেন। অবাক হয়ে আমি ওঁর শুটকি পেটের দিকে ইশারা করতেই রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ঝোলা থেকে কী একটা বের করে ফুঁ দিয়ে অভিশাপ দেওয়ার পরই আমার পেট ফুলে যায়। ভুঁড়ি বেরিয়ে আসে। অনেকেই পিঠ-পিছে আমায় ভুঁড়িগোপাল বলেন। আমি জানি।

রোজ সকালে ৬৪ রকমের আসন এবং রোজ বিকেলে টানা ৪৬ মিনিট জিম করার পরও আমার ভুঁড়ি এক মিমি কমেনি। বরং প্রতি গ্রীষ্মে উষ্ণতা কয়েক ডিগ্রি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেগ্লোবাল ওয়ার্মিংএর সঙ্গে আমার পেটও কয়েক মিমি বাড়ছে। এই বিষয়ে আমার এক সুহৃদমিষ্টি মেয়ে মিমি কর মহাপাত্র প্রস্তাব দিয়েছিলপাঞ্জাবি পরো। পেট বোঝা যাবে না। স্বীকার করতে কিঞ্চিৎ লজ্জা লাগছেতবুও লিখে রাখছিসেই থেকেই আমি মূলত পাঞ্জাবি পরি।

পেট পুংলিঙ্গ। পেটি স্ত্রীলিঙ্গ। এই বিষয়ে মৎস্যপুরাণের ১০৮ নং অনুচ্ছেদে বিস্তারিত লেখা আছে। মাছ আর স্ত্রী লোকের পেটি হয়। বাকি জীবকুলের অনলি পেট হয়। তবুও এই জালিম দুনিয়া বলে মেয়েদেরপেটেনা কি কথা থাকে না! কি ভয়ানক পুরুষতান্ত্রিক প্যাঁচ! ভাবলেই পেট গুলিয়ে ওঠে। মাগো!

রবীন্দ্রনাথ প্রেমপূজা আর প্রকৃতি পর্যায় ছাড়াও পেটপর্যায় নিয়েও কালজয়ী লেখা লিখেছেন।দামোদর শেঠকবিতায় তার উল্লেখ পাওয়া যায়। এই পর্যায়কে তিনি একপ্রকার পুজোর সঙ্গেই তুলনা করেছেন। পেটপুজো। এক পেটরোগা রবীন্দ্রগবেষক একথা বলেছিলেন। ডালপুরি আর জিলিপি একসাথে পেটে পুরতে পুরতে।

একবার এক পেট-ফ্রেন্ডলি রেস্তোরাঁতে গিয়ে পেট ভরে সাঁটানোর পর দেখি বিশাল বিল ধরিয়ে দিল। ভেবেছিলাম পেট-চুক্তির রেস্টুরেন্ট। পেট-বান্ধব। যত খুশি পেট ভরে খাওবিল একই। ওমা! দেখি অন্য কেস। পেটের গুরগুর চেপে আমি ওদের পেট-ফ্রেন্ডলি লেখাটা দেখালাম। ওরা আমায় গম্ভীর মুখে অন্য টেবিল দেখাল। দেখিঅনেকেই বিড়ালডগি নিয়ে বসে আছেন। কোনের দিকের টেবিলেকব্জিতে নাগিনের উল্কি করা এক তরুণী পরম আদরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে এক কালসাপকে মিল্কশেক খাওয়াচ্ছে। চকিতে দুটি বিষয় মালুম হলো) বাংলাপেটআর ইংরেজিপেটএক নয়। ) পেট-ফ্রেন্ডলি রেস্টুরেন্টে যে ভৌ ভৌ গুলো আসে ওরা সকলেই ডগি। কুকুর নয়। 

আমার আবার ইংরেজিটা ত্যামন আসে না। যদি অনুগ্রহপূর্বক বুঝিয়ে দ্যান।

বর্ধমান স্টেশন আর পৌরসভা অফিসের মাঝে আছে স্পন্দন কমপ্লেক্স। স্টেডিয়াম। স্টেডিয়াম মার্কেটে কিছু ভাতের হোটেল আছে। মা তারা হিন্দু হোটেল। আল্লার দান মুসলিম হোটেল। ওঁরা চিৎকার করে ডেকে ডেকেকখনও বা পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়ে গিয়ে ভাত খেতে বাধ্য করেন। অদ্ভুত গাজোয়ারি আপ্যায়ন। সেখানে দেখেছিলাম লেখা আছেঃ পেট ভরে ভাত।

আমরা তো গরিব আদমি। আমাদের নাই ঘরে খাই বেশি ছিল। এক রাতে নুন আনতে গিয়ে আমাদের পান্তা ফুরিয়ে গেল আর আমরা খালি পেটেপেটে কিল মেরে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ভুখা পেটে নিন্দ নহি আতি বলেইপেট ভরে ভাতসাইনবোর্ড মাথায় নিয়ে ভোর-ভোর স্পন্দন স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের ওই ভাতের হোটেলে গিয়ে দেখি সব বন্ধ। অথচ স্পষ্ট বাংলায় লেখা পেট ভরে ভাত!

ফুটপাথে এক ভিখিরি শুয়ে ছিল। একমুখ দাঁড়ি গোঁফ। অনেক কালের কালো ছোপছোপ মুখের সেই ভিক্ষুককে কিছুটা দেবদূতের মতো দেখতে। পেটে খিদে চেপে তাকে জিজ্ঞেস করলাম এই ভাতের হোটেল কখন খুলবেখুব খিদে পেয়েছে। ভিক্ষুক ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষন তাকিয়েনির্বাক ডান হাতটা একবার পেটে একবার মুখে আর একবার কপালে ঠেকাল।

হাত তিন জায়গায় ঠেকালেওমুখে একটিও কথা না বললেও বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের লোক বুঝতে পারবে ওই ভিক্ষুক আসলে খিদের কথা বলছে। পাপী পেটের কথা বলছে। খিদের ভাষা সর্বজনীন। আমিও বুঝলাম।

খিদে মাখা সেই আশ্চর্য ভরে এক পেট খিদে নিয়ে আমি আর কিছুটা দেবদূতের মতো দেখতে ভিক্ষুক হাওয়ায় হাওয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছিলাম এক অভিশাপঃ বেকার বাঙালি ছেলেমেয়েরা কিছু না করতে পেরে যেন ফুডব্লগার হয়। একটু খাওয়ার জন্যপাপী পেটের জন্য তারা যেন রাজুদার পকেট পরোটা থেকে ফোন পে পরোটা থেকে ক্লাব কচুরি থেকে বিরিয়ানির দোকান থেকে দোকানে হাভাতের মতোহ্যাংলার মতোনিখাকির ব্যাটাবেটির মতো মোবাইল হাতে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। মাগনার খেয়ে বেড়ায়। ওদের সবার খাবারের মাংসের পিস যেন ঝরে ঝরে পড়ে। ঝরে ঝরে পড়ে।

Comments

Popular Posts

Tamohan, Govt. of India Registration Number (PRGI) WBBEN/25/A1160, New Genaration Acclaimed Bengali Literary Research Journal (Language, Literature & Cultural Studies) & Independent Publication. Maynaguri, Jalpaiguri, West Bengal, India. Estd. 2023.