মনের ভাষা ও ভাস্কর্য | অর্ণব সামন্ত | রম্যরচনা ৩
ও মন কখন শুরু কখন যে শেষ কে জানে। এ যেন কিছু জিনিস স্প্রিংয়ের মতন একদিকে গুটিয়ে অন্যদিকে কিছু জিনিস খুলে খুলে যাচ্ছে। বিগত সময় আগত সময়ের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে ও মন তুমি ভাবছ? জলে থেকে কুমিরের সঙ্গে বিবাদের মতো মন দ্রোহে বিদ্রোহে বিপ্লবের পথে হাঁটছে তো হাঁটছে। শেষ যেন হয় না এই পথ পরিক্রমা। ইচ্ছেটাই তো কাল দাঁড়াল। নিরাকার নির্বিকার এক মন যদিও তখন সে মনহীন অবস্থায় ছিল বাদ সাধল বহু হতে গিয়ে। প্রকোষ্ঠে প্রকোষ্ঠে জমল কত সহস্র রঙ রূপ রস ও বাহার। তো এ বলে তো আমায় দ্যাখ, ও বলে তো আমায় দ্যাখ। সসেমিরা হয়ে যখন মাথা ঘুরঘুর বুক দুরদুর তখন একটি সাধু অবয়ব ধ্যানে বসে গেল। বলে উঠল, তরঙ্গ থামাও থামাও হে। ডুবুরি ডুবুরি হও সাগর সেঁচে মুক্তো তুলে আনো। তোমারই নাচদুয়ারে মণিমানিক্য গচ্ছিত তুমি তা' বাইরে খুঁজে বেড়াচ্ছ হে কস্তুরী মৃগের মতন। কি লজ্জা কি পরমাদ। নিজের ঘরই তুই চিনলি না হে উদাসী? কি করে পারিস তুই ছলাৎছলে দিন কাটিয়ে দিতে? ক্লীবতা হীনতা দীনতা হীনমন্যতা তোমার অন্ততঃ শোভা পায় সিংহ বিক্রম। স্বচ্ছ স্থির পুষ্করের আরশিতে দ্যাখো নি কি নিজেকে? আরশিনগরের পড়শিকে চেনোনি কি সে কে তোমার হয়? কি সম্পর্ক কি পরম্পরা? নাকি নিজের স্বরূপ স্বরূপ তুমি সব ভুলে গ্যাছো? ছিলে কি একদা সরল জলের মতো একা নির্ভুল নিষ্পাপ। সোরা সাইকোসিস সিফিলিস তোমার গায়ে জামা জামা হয়ে বসে গেল। তুমি পেলে না স্বাভাবিকতা সরলতা সহজতার হাওয়া। দাঁড়ালে না একা একা ভীষণ একা একা নিজেকে বুঝে নিতে যুঝে নিতে বিশালের মাঝখানে। নিজের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রকে জুড়ে দিতে বিশালে, আবহমানের স্রোতে। দ্যাখো ভায়া সংকোচনই মৃত্যু প্রসারণই জীবন। কুন্ডলীকৃত শক্তিকে মেলে দাও অব্যক্ত অনির্বচনীয় উল্লাস ডানায়। মুক্তিবেগে ছুটে যাক তা' আকাশ থেকে অন্য আকাশে, মাধ্যাকর্ষণের সীমা ছাড়িয়ে গ্যালাক্সিতে ব্ল্যাকহোলে। সেখান থেকে সুকঠিন প্রসবে নামুক প্যারালালি। খুঁজে নিক নিজের আসল নীড়।অণু পরমাণুতে ভাঙতে ভাঙতে তার মধ্যে খেলা করুক আগ্নেয়গিরি নীহারিকা আলো আলো আলো। সমস্ত অন্ধকার লজ্জা পেয়ে বিন্দু হয়ে যাক। আলোর নটরাজ নৃত্য শুরু হোক শুরু। ভাবো হে নিজেকে নিত্য শাশ্বত বুদ্ধ। হদয়ে থাকুক এক ব্রক্ষ্মান্ড ভালোবাসা। পারলে বাকি তিন পাদে ভালোবাসা। কেন্দ্রে থাকুক অখন্ড জ্ঞান। যে না থাকলে ভালোবাসাকে দেখবে কে। তার চোখ ফোটাবেই বা কে? বড়ো কঠিন জটিল সময় হে এখন। অভিমন্যুর চেয়েও বড়ো হয়ে তবেই বেরুতে হবে। নিষ্ক্রমণ, মহানিষ্ক্রমণ। অনেক সময় এড়িয়ে যেতে হবে। অনেক সময় তীব্র মুখোমুখি হতে হবে। অগ্নি বাণের বিরুদ্ধে বরুণ বাণ ছুঁড়তে হবে। দীপ্তি হতে হবে সূর্যকিরণের মতো তেজী চন্দ্রকিরণের মতো স্নিগ্ধ।অভয়ের ঘরে ঠাঁই নিতে হলে কুয়োর ব্যাঙের মতো ঘরকুনো হলে চলবে না। অভিযানে অভিসারে যেতে হবে দুর্গম থেকে দুর্গমতর পথে। তুলোর গদিতে শুয়ে কেউ কবে মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণ করেছে। নিজেকে মেলে দিয়ে বিশালে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ো নিজেকে। বিশ্লেষণে এসো সমালোচনায় এসো প্রাণের হিল্লোলে এসো জয়ের উল্লাসে এসো। পেছনের ছায়াকে দেখো না মায়াকে দেখো না শুধু সমুখের পথ দ্যাখো। অবসাদে ক্লান্তিতে মুহ্যমান হলে পেছনের পথ দেখো নিজেকে নিজে বলো, আমি একাই পেরেছি এতটা পথ আসতে তাহলে আমিই পারব সমুখের পথে মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতে। এক ঘুম থেকে অন্য ঘুমে পড়ার আগে পর্যন্ত। শুধু কনসেন্ট্রেট করো সমস্ত শক্তিকিরণকে উত্তল লেন্সের মতো এক বিন্দুতে সংহত করতে, সংযম করতে। তাহলেই হবে সমস্ত সাফল্য। মনের ত্রাটক সিদ্ধিতে সমস্ত জগৎ হয়ে যাবে পুতুলের মতো। হৃদয় প্রিজমে আপতিত আলো যত রকমের রঙের রশ্মি হয়ে ফুটে উঠবে। সময়ে তা' একত্র হয়ে সাদা জ্যোতি হয়ে উঠবে। ফ্রয়েড মাথা চাড়া দেবে, পাভলভ রিফ্লেক্স অ্যাকশন করবে, ডারউইন শেখাবে যোগ্যতমের উদবর্তনের কথা। বিবর্তনে বিবর্তনে ছুটবে মননদীর স্রোত। পরিবর্তন যেখানে জীবনের একান্ত প্রতীকী। অভিজ্ঞতার পাতা পড়তে পড়তে তার চঞ্চলতা দূর হবে স্থির প্রত্যয়ে অনুভবে। যুক্তি তর্ক বিতর্কের উপস্থাপনা ঘুচে গিয়ে আসবে অথই জ্ঞান অদ্বিতীয় চেতনা। হাজার হাজার প্রতিফলনে হাজার হাজার মন ধরা এককের মনে এক পরামনে। এ যেন পথ চলতে চলতে নিজের সঙ্গে দ্যাখা। ওরে ভ্রমর সেই মনের মধ্যিখানে আস্ত জগৎবাড়ি। বাহির ভিতর এক হয়ে সেই ক্ষণে। সমস্ত মন লুকায় যখন এক মনে। সেই প্রভুত্ব করে তখন সবখানে। রাগে ক্ষোভে শান্তিতে মানে অভিমানে। সেই মনই তো দাপিয়ে বেড়ায়। অবাধভাবে অবাধ্য হয় মন জানে। কোয়ান্টামের স্তরে স্তরে কত যে তার রঙ ঢঙ সুর রূপ রস বাহার লাবণ্য। সত্যি জীবন যেন জীবন অধিক সেই জন্য। এক মনেতে পরিস্ফুট হাজার মন। এক জীবনে উপভোগ লক্ষ জীবন। সাজাও মন সাজাও মন চৌম্বকীয় মনের অনুগমনে। তাহলে আর কি থাকে অধরা এই ভুবনে। খেদ করে কেউ বলে না জীবন এত ছোট ক্যানে। ভালোবাসিবার মতো ভালোবাসিতে জানলে মিটে যায় সমস্ত সাধ। সাধ্যের করতলে আসে সাধ্যাতীত। মনের নাগালে আসে মনাতীত। মন হয়ে সরল স্বচ্ছ জলের মতো। মন হয়ে চিরস্থির এক আরশি। তাই বলি পাগলা মনটারে তুই বাঁধ। পাগলা অশ্বের মতন ওকে খানিক ছুটতে দে ছুটতে দে। একসময় সে স্থির শান্ত বসবে তোর পায়ের কাছে। সে হবে তোর চিরন্তন ভৃত্য ভালোবেসে ভীষণ ভীষণ ভালোবেসে। তারপরে সে নিজেই প্রভু নিজেই ভৃত্য। নিজেই রাজা আমির নিজেই প্রজা বান্দা।
মন যেন সালভাদোর দালির মিরর রিফ্লেকশন বা ইমেজের উপরে নির্ভর করে আঁকা ছবির মতো। যেখানে মিরর হাউসে অনেক মিরর যত্রতত্র সেটিং করা আছে। তার যে কোনো এক জায়গায় একটি মানুষ দাঁড়ালে সমস্ত মিররে সেই মানুষের ছবি দেখা যাবে তবে ভিন্নধরনের প্রতিবিম্ব নিয়ে। এ যেন খন্ড খন্ড মন খন্ড খন্ড আমির ভেতর দিয়ে আসল বা পূর্ণ মন, আসল বা পূর্ণ আমির অনুসন্ধান আবিষ্কার করা। আংশিক আংশিক দর্শনের পর পুরোপুরি নিজেকে দেখা। সামগ্রিক দর্শন। যে মন দাঁড়ায় আরশিনগরের আরশির সামনে। আসল মনের খবর কে রাখে। ময়ূর মন যথা সময়ে যথাস্থানে নেচে ওঠে উল্লাসে। হাজার রকমের রঙ রূপ রস বাহারে সে ফেটে পড়ে বিস্ফোরণে। মনের একপ্রান্তে মনের কিছু অংশ আলাদা করে তাকে প্রত্যক্ষদর্শী করে সরেজমিনে মনের বাকি অংশের কীর্তিকলাপ দ্যাখা আর মজা উপভোগ করা। যেন নীলাকাশ মন তার দৃষ্টিতে দেখছে বিভিন্ন রঙের মেঘমনগুলোর ভেসে যাওয়া। আর ভীষণভাবে তা' উপভোগ করছে সেই নীলাকাশ মন। এ যেন নুনের পুতুল হয়ে সমুদ্রকে বিচার বিশ্লেষণ করতে যাওয়া। পদ্মপাতায় টলমল জলবিন্দুর পুষ্করিনীকে পোস্টমর্টেম করতে যাওয়া। পরিধিতে প্রান্তিকে দাঁড়িয়ে গোটা বৃত্তের গতি প্রকৃতিকে বুঝতে যাওয়া। ভীষণ সোজা মনে হলেও ব্যাপারটা ভীষণ কঠিন।
মন তো প্রতিফলনপ্রিয়। যা দ্যাখে তাই ভাবে নিজেকে। ভাবতে ভাবতে প্রকৃত স্বরূপ বিস্মৃত হয়। অশান্ত অস্থির তরঙ্গঘন মনে সত্তার প্রতিবিম্ব পড়বে কিভাবে? অহংকার বা ইড মনের প্রসারণ, পূর্ণবিকাশের প্রধান অন্তরায়। অতীতকে জাপটে ধরে থাকলেই তবেই না অহংকার মাথা চাড়া দেয়।তখন সে কুয়োকে মনে করে সমুদ্র। আবার জিরো ইড হলে মানুষ বাঁচতে পারে না। কোনো কাজই করতে পারে না। একটা কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা এখানে কাজ করে। সবচেয়ে নিরাপদ অথচ মুক্তিপ্রবণ উপায় হল অহংকারকে রাখো কিন্তু তাকে স্থবির কঠিন করে রেখো না। রিজিডিটির পরিবর্তে তার মধ্যে মোবিলিটি আনো। অহংকারকে চূর্ণবিচূর্ণ করে করে ফ্যালো জলের মতো সরল স্বচ্ছ গতিশীল। যে কোন পাত্রে যে কোন আধারে তাকে রাখা যায় আর সে তখন সেই রূপ ধারণ করে। এটা শুনতে কিঞ্চিৎ সুবিধাবাদী সুযোগবাদী মনে হলেও ব্যাপারটা তা' কিন্তু নয়। আসলে অভিযোজিত হওয়া বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে। তাতেই বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সে চলে যায় বিবর্তনের পথে। সে চলে যায় সমস্ত কিছু বাধা বিপত্তি ওভারকাম করে জয়ের পথে সাফল্যের পথে। আর একটি ঝামেলার ব্যাপার আছে লিবিডো বা কামনা বাসনা। কামনা সঞ্জায়তে কামনাম্। একটি কামনা থেকে হাজার হাজার কামনা বাসনার জন্ম হয়। যেহেতু কামনা বাসনা থেকে আমাদের শরীরের জন্ম, মনের জন্ম। সুতরাং সেই শরীরে মনে কামনা বাসনা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তা' মাত্রাছাড়া হলেই বিপত্তি। জীবন অবাধ অবাধ্য হলেও সে বাঁধা থাকে যখন একটি মাত্রার মধ্যে তখন কামনা বাসনা একটি মাত্রাবৃত্তের মধ্যে থাকা সমীচীন। তাই বলে প্রাণের স্ফুর্তিতে মাঝেমধ্যে লাগামছাড়া হবে সেটাই স্বাভাবিক। মনের প্রকৃতিই হল মাঝেমধ্যে যত্রতত্র উড়াল দিয়ে আবার চেনা জীবন যাপনের ছন্দে রুটিনে ঢুকে পড়া। তাতেই সে নিরাপদ সুরক্ষিত অনুভব করে। ল অফ অ্যাসোসিয়েশন - এ অনেক জটিল জড়িঘন্টি ব্যাপার উঠে আসতে পারে কিন্তু নিজেকে সচেতন হয়ে লজিক ঠিক রেখে সেইসব সমস্যার সমাধান করতে হবে। মনকে করে দিতে হবে স্থির পুষ্করের মতো, যাতে সে নিজের মুখ নিজেই পরিষ্কারভাবে দেখতে পায়। মনের ইন সাইড আউট করে দেখতে হবে। মনকে করতে হবে সমুদ্রের মতো, যাতে জিজ্ঞাসার বুদ্বুদ ফেনা তৎক্ষণাৎ সেখানে সমাধিত হয়। ভাবনায় ভালো কিছু দিয়ে মন্দ কিছুকে প্রতিহত, ধ্বংস করে দিতে হবে। নিজের মনকে রাখতে হবে নির্ভার নির্বিকার নির্ভেজাল। যেমন পায়ে কাঁটা ফুটলে অন্য একটি কাঁটা দিয়ে তা' তুলে দু'টোই ফেলে দিয়ে বিন্দাস জীবন কাটাতে হয়।
মনের পাতায় মনকে রেখে মন দ্যাখা। যে দ্যাখে সে জানে। কত কঠিন কত জটিল। তবু এ ছাড়া তো আর উপায় নেই। আংশিক আংশিক দর্শনের পর পুরোপুরি সমগ্র সমস্ত মনকে দর্শন করা। মনই ম্লেচ্ছ কুৎসিততম। আবার মনই সুন্দরতম। মন পাগলা হাতি হয়ে গেলে যেমন সমস্ত যাবে সর্বনাশে তেমন শান্ত স্থির হলে জগতের কোনো কিছু তার অধরা থাকবে না। তখন সে শুভ সাফল্য জয়ের প্রতীক। ওরে মন তুই আমায় ডুবাইলি রে ভাসাইলি রে। অকূল দরিয়ার বুঝি কূল নাই রে। গহীনগহন সে অথইয়ে হারিয়েও মজার অন্ত নেই। তাই তোকে আমি সব জাগয়ায় সর্বক্ষণ চাই। মন যেন আগুনের মতো সঠিক ব্যবহারে অনেক অনেক কাজে সাফল্য জয়। নাহলে ব্যবহার ঠিকঠাক না জানলে মুহূর্তেই পুড়ে ছারখার। কারণ মনই মানুষের পরম বন্ধু, আবার মনই মানুষের চরম শত্রু। তাই মন চল নিজ নিকেতনে। জগতের সমস্ত মূল্যবান মণিমাণিক্য তোমার মধ্যে আছে মন। তুমি পরের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াচ্ছো। একবার মন ভরে মনভুলানিয়া মনকে দ্যাখো আর মগ্ন মুগ্ধ হয়ে যাও। মনের মধ্যে খুলে যাক সপ্ত নয় সপ্ত কোটি ভুবন। মনের সেই জ্যোতিতে প্লাবিত হয়ে যাক জগতের সমস্ত কিছু। বিরাট বিশালের ব্যাপ্তি পেয়ে সেই প্রতিভাত উজ্বলিত করুক জীবন যাপন। মনের তো শুরু নেই শেষ নেই। অনাদি অনন্তের মতো শুধু নিরবধি। আবহমান চেতনার স্রোত নিয়ে সে স্রোতস্বিনী।মনের অবাধ অবাধ্য নীরব চলায় বহির্জগতের প্যারালাল - এ মনে ফুটে ওঠে অন্তর্জগৎ। হে মানব তোমার মন নাই, মন নাই কেন? তোমার মন চাই দুরন্ত প্রবল মন চাই। মনের স্রোতের তোড়ে ভেসে যাক সমস্ত জগৎ। ভাবজগৎ টইটম্বুর হলে আর কি চাই! মনের সুখে মন বুঁদ থাকুক মগ্নতায় মুগ্ধতায়। জগতের সুখ শান্তি তখন তো তার করায়ত্ত! ওরে মন তুই থাক না নিজের মেজাজে মর্জিতে নিজের মতন।
আয় মন মুখোমুখি একবার নয়ন ভরিয়া তোকে দেখি। সেজানের সাত স্তরে রঙ লাগিয়ে তোকে দেখি। রেমব্রান্টের আলো আঁধারির রঙে তোকে আবিষ্কার করি। আবিষ্কারে আবিষ্কারে উঠে আসুক চেতন অবচেতন অচেতন মনের কারুকার্য ভাস্কর্য কারুভাষা। কোলাজে মন্তাজে ফুটুক মনের নিজস্ব ভাষা। মনের সংকোচনই মৃত্যু, মনের প্রসারণেই জীবন। মনের ইচ্ছাশক্তিতেই জীবন যাপন, জগতের সমস্ত কিছু ঘূর্ণায়মান। কখন মন গেয়ে বন্দিশ ভৈরবীতে, কখনো দরবারি কানাড়ায়, কখনো ইমনকল্যাণে। মন কখনও পাহাড় পর্বত চূড়ায় জমা বরফ, কখনও স্রোতস্বিনী হ্রদ পুষ্করিনী সমুদ্রের জল, কখনও জলীয় বাষ্প আকাশে মেঘ আকারে, কখনও পতনশীল বৃষ্টি আকারে উপস্থিত ও দৃশ্যমান। পরিস্থিতিগত আকারগত আয়তনগতভাবে আলাদা আলাদা হলেও মূলগতভাবে তারা এক। যত মন তত পথ তত মুক্তি। এই জগৎ রহস্যের মতো মনের রহস্যও অবোধ্য, অধরা। স্থির মন যদি অস্থির মনকে শান্ত করতে পারে তবেই তার আরশিনগরের আরশিতে ফুটে ওঠে স্বরূপের প্রতিবিম্ব। প্রেমের মোড়কে প্রজ্ঞা এসে হাজির হয় তখন মনের আঙিনায়। মন ছুটে যায় মুক্তিবেগে পেছনে ফেলে সমস্ত পিছুটান সংস্কার আকর্ষণ মায়া মোহ। মন হয়ে যায় বিন্দাস নির্ভার নির্বিকার। তখন মনকে আর পায় কে! সে তখন আলোঘনবিগ্রহ, থরে থরে সাজানো রাশি রাশি আলো আলো আলো আলো!
Comments
Post a Comment