তমোহন উত্তরবঙ্গের অন্যতম ভারত সরকারের পি.আর.জি.আই কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক বার্ষিক গবেষণামূলক মুদ্রিত পত্রিকা। পাশাপাশি লেখক-পাঠকদের অনুরোধে অনলাইন ডিজিটাল ওয়েবপত্র হিসেবে আমাদের আত্মপ্রকাশ। সারাবছর জুড়ে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্ত থেকে তমোহনে লিখতে ও পড়তে পারবেন; পাশাপাশি দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে তমোহন ক্রয় করতে পারবেন। আপডেট পেতে আমাদের সাথে সামাজিক মাধ্যম ও ওয়েবসাইটে যুক্ত থাকুন। প্রকাশিত সংখ্যার বিবরণ : ১. (২০২৩-২৪) : তমোহন, ময়নাগুড়ির ইতিহাস, প্রথম বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, নভেম্বর ২০২৩, ২. (২০২৪-২৫) : তমোহন, সাহিত্য ও ইতিহাসের পাতায় উত্তরবঙ্গ, দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা, জানুয়ারি ২০২৫

শশিবালা ও নাগদেবতা | শুভজিৎ দত্তগুপ্ত | গল্প ২

বাঁকুড়ার এক প্রত্যন্ত গ্রামে, পাহাড় ও শালবনে ঘেরা লামচুয়া নামে এক আদিবাসী পল্লিতে জন্ম নেয় শশিবালা। তার মা ছিল ঝুম চাষি, বাবা ছাতিম গাছের ছায়ায় বাঁশি বাজিয়ে দিন কাটাতেন। শশিবালার চোখে ছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, আর হৃদয়ে ছিল পাহাড়ের মতো দৃঢ়তা। কিন্তু সেই গ্রামে একটা ভয় ছিল, যেটা কাউকে মুখ ফুটে বলা যেত না— “নাগঝোলা”, এক গোপন পাহাড়ি গুহা, যেটা নাকি অভিশপ্ত। গ্রামবাসীরা বলত, প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এক কুমারী মেয়েকে সেই গুহায় উৎসর্গ না করলে ভূমিকম্প, খরা আর বজ্রপাত শুরু হয়।গাঁয়ের মোড়ল, বীরেন হেমব্রম, জানায়— এবার শশিবালাকেই দিতে হবে। মেয়েটার বুক ফেটে যায়, কিন্তু সে জানত, শুধু কান্নায় কিছু হবে না।

সে রাতে শশিবালা গিয়ে দাঁড়ায় নাগঝোলার মুখে। ভয়াবহ অন্ধকার, বাতাসে সাপের গন্ধ, গুহার ভিতর চকচকে দুটো চোখ।

কিন্তু আশ্চর্য, বিশাল এক সাপ যেন তার সামনে মাথা নিচু করে। শশিবালা থমকে দাঁড়ায়, আর ভাবে— এই কি মৃত্যু?

কিন্তু হঠাৎ সাপটা বলে ওঠে, “তুই ভয় পাবি না, আমি তোকে খেতে আসিনি। আমি বন্দী... আমি নাগদেবতা। আমার উপর অভিশাপ— মানুষ হয়ে উঠতে পারি না যতক্ষণ না কেউ নিজের প্রাণ দিয়ে ভয় জয় করে।”

শশিবালা তাকে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে আমাকে কেন ডাকা হয়েছিল?”

নাগদেবতা বলে, “কারণ তুই আলাদা, তুই ভয়কে জয় করতে জানিস।”

শশিবালা তীব্র সাহসে বলে, “তুমি যদি সত্যিই দেবতা হও, তাহলে এই গাঁয়ের মেয়েদের আর কেন বলি দেওয়া হয়?”

নাগদেবতা নিঃশ্বাস ফেলে, “এটা মানুষদের বানানো ভয়, যা দিয়ে ওরা মেয়েদের দাবিয়ে রাখে।”

শশিবালা বলে, “তাহলে আমাকে সাহায্য করো, এই অভিশাপ ভাঙো, আমি চাই নারীরা নিজের ইচ্ছেতে বাঁচুক, ভয় নয়।”

সেই রাতেই এক অলৌকিক আলোয় সাপটি মানুষের রূপ নেয়—এক যুবক, তার কপালে নাগচিত্র, চোখে ধ্যানে গভীরতা। সে বলে, “তুই আমাকে মুক্ত করলি, এবার আমরাও এই গ্রামের কুসংস্কার ভাঙবো।”

সেই রাতের পর শশিবালাই হয়ে ওঠে গ্রামের প্রথম নারী মোড়ল। তার কথায় বন্ধ হয় ‘বলিদান’, গড়ে ওঠে মেয়েদের বিদ্যালয়, গুহার সামনে প্রতিষ্ঠিত হয় 'নাগদেবতা ও শশিবালার মন্দির'― ভয়ের প্রতীক নয়, সাহস ও মুক্তির চিহ্ন।

গ্রামের মানুষ আজও বলে, “যার ভেতরে শশিবালার মত সাহস থাকে, তার সামনে সাপও মাথা নিচু করে।”

Comments

Popular Posts

Tamohan, Govt. of India Registration Number (PRGI) WBBEN/25/A1160, New Genaration Acclaimed Bengali Literary Research Journal (Language, Literature & Cultural Studies) & Independent Publication. Maynaguri, Jalpaiguri, West Bengal, India. Estd. 2023.