একটু দেখা | সুব্রত দত্ত | গল্প ১
শিলিগুড়ি জংশন স্টেশনে 'কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস' এসে দাঁড়িয়েছে। নির্দিষ্ট সংরক্ষিত আসন খুঁজে নিয়ে বসে পড়ে দিব্যেন্দু। ট্রেন ছাড়তে কিছুটা সময় নেবে, ইঞ্জিনটাকে ঘুরিয়ে নিতে হবে বলে। সকালবেলায় গাড়ি ধরা তার ক্ষেত্রে ভীষণ ঝকমারি। বেশি রাতে ঘুমোয়। তাই লেট রাইজার। 'চায়ে', 'চায়ে' হাঁক শুনে দিব্যেন্দু নিচে নেমে চা-বিস্কুট খায়। তাড়াহুড়োয় বাড়িতে কিছুই খাওয়া হয় নি। ট্রেন হুইসল দিতেই সে নিজের আসনে বসে। ট্রেন ছেড়ে দিল আলিপুর দুয়ার জংশন স্টেশনের উদ্দেশ্যে। এবার সে সহযাত্রীদের দেখে নেয় এক ঝলক। মহিলাদের দিকে সে সরাসরি তাকাতে অনভ্যস্ত। ভদ্রলোকই মনে হলো সবাইকে। আসলে এভাবে অচেনা লোকের সাথে সখ্যতায় সে তার লেখার অনেক রসদ খুঁজে পায়। পাশেই একটা বাচ্চা ছেলে বসেছে বাবা মায়ের সঙ্গে। ছেলেটি জানালা দিয়ে গোগ্রাসে দু'দিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করছে। লোভ সামলাতে না পেরে দিব্যেন্দু কথা শুরু করে।
― তোমার নাম কি?
― শুভ, শুভদীপ ব্যানার্জী।
― বাড়ি কোথায়?
― শিলিগুড়ির আশ্রমপাড়ায়।
― কোন ক্লাস?
― নাইন।
― বাঃ, ভালো। কোথায় চললে?
― নিউ মাল জংশনে নেমে ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে
ত্রিবেনীতে যাবো ঘুরতে।
― এত ঘুরে যাচ্ছো কেন?
এবার শুভদীপের মা উত্তর দিলেন,
― এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতেই এমন সিদ্ধান্ত। তাছাড়া ভিড় এড়িয়ে নির্ঝঞ্ঝাটে জার্নি করা যাবে। শুভ বলে,
― তাছাড়া সেবকে যদি স্টপেজ দেয়, তাহলে নেমে যাবো। গাড়ির ড্রাইভারকে করোনেশন ব্রিজে আসতে বলবো। সেই সময়টুকু সেবকেশ্বরী কালী মন্দিরটা ঘুরে নেবো।
― বাঃ, সুন্দর প্ল্যান বানিয়ে নিয়েছো। অবসর সময়ে কি করো?
― গল্পের বই পড়ি।
― তাই? বাঃ!
গুলমা স্টেশন পেরিয়ে গভীর সবুজ অরণ্যের বুক চিরে বিশালকায় এক কেন্নোর মতো গাড়ি ছুটে চলে। বাঁদরগুলো মনে হয় দিব্যেন্দুকেই ভেংচি কাটছে। কয়েকটা ময়ূরের দেখা মিললো। মাঝে মাঝে হাতিরাও রেলপথে দাঁড়িয়ে থাকে। আজ হয়তো এখনো তাদের ঘুম ভাঙে নি! দিব্যেন্দু বলে,
― কোন ধরনের লেখা ভালো লাগে?
― গোয়েন্দা আর এডভেঞ্চার। ফেলুদা আমার প্রিয়।
― হুঁ। মৃগাঙ্ক গুপ্তের বই পড়েছো?
― হ্যাঁ, গোয়েন্দা দেবেশ আর তার সহকারী পার্থ!
― দেবেশ নামটা মূলতঃ কার বলতে পারবে?
― হ্যাঁ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
― তুমিও এসব বই পড়ো?
ইতিমধ্যে গাড়ি সেবক স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়ে। শুভ 'আসছি' বলে বাবা মায়ের সঙ্গে তাড়াহুড়ো করে নেমে যায়। দিব্যেন্দুও আর উত্তর দেওয়ার সময় পেলো না। সেবকে তো এলাহি কারবার চলছে। বাঁ দিকের পাহাড়ে টানেল খুঁড়ে সিকিমে যাওয়ার রেলপথের কাজ চলছে। ট্রেন আবার চলতে শুরু করে। তিস্তা সেতু পেরিয়ে পরপর দু'টো অন্ধকার টানেল। সেখান থেকে বেরোতেই আলোর ঝলকানিতে সামনের আসনে বসা ভদ্রমহিলার চোখে চোখ পড়ে যায়। হাল্কা সবুজ রঙের ঢাকাই জামদানী শাড়ি পরনে। প্রসাধনীর আধিক্য নেই। কপালে ছোট্ট লাল টিপ। মার্জিত লিপস্টিকের আভা। স্বচ্ছন্দ আভিজাত্যের প্রকাশ। দিব্যেন্দু বেশ কিছুক্ষণ থেকে তার সহজাত রিফ্লেক্সে বুঝতে পারছিল কেউ তাকে লক্ষ্য করে যাচ্ছে। এবার সেই ভদ্রমহিলা বলে ওঠেন―
― আপনি কি দিব্যেন্দু সেন?
― হ্যাঁ, কিন্তু...
ভদ্রমহিলা অতিউৎসাহী হয়ে বলে,
― আমি চন্দ্রানী।
― খুব চেনা চেনা লাগছে। চন্দ্রা...
― সেই যে, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ ―ভুলে গে...
― ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে। আসলে এতদিন পর তো! তা এদিকে কোথায়?
― হাসিমারায় যাবো। স্বামী এয়ারফোর্সের অফিসার। কলকাতায় বাপের বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি ছুঁয়ে এলাম রুটিন মাফিক। আর তু...!
― কি হলো, থামলে কেন?
― তুমি কোথায় যাচ্ছো?
― আলিপুরদুয়ারে একটা সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দিতে।
― লেখালেখি করো বুঝি?
― ওই একটু আধটু।
চন্দ্রানী একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে দেখে দিব্যেন্দু মুচকি হেসে বলে,
― ওভাবে কি দেখছো?
― নাঃ, কিছু নয়।
― উঁহু, কিছু তো বটেই!
― দেখছি, তোমার হাসিটা। একই রকম রয়ে গেছে। ওটা দিয়েই আমাকে জখম করেছিলে। মনের ভেতরে এখনো সে দাগ রয়ে গেছে।
― কেমন আছো?
― কেউই বোধহয় কোথাও ভালো নেই! তুমি?
― ওই, চলে যাচ্ছে আর কি। তোমার তো খারাপ থাকার কথা নয়!
― হুঁ, মনের বাইরের পাওয়ায় কোনো অভাব নেই। কিন্তু ছোট্ট এক টুকরো খুব মিষ্টি অতীতের আলোটাকে আজও মনে মনে খুঁজে বেড়াই। আজ পেলাম, কিন্তু অন্য রূপে। আসলে, আমি অতিরিক্ত ভালোবাসা প্রকাশ করে ফেলেছিলাম। তাই এমন অবহেলাই হয়তো আমার প্রাপ্য ছিল!
দু'দিকের সবুজ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতে বাগরাকোট, ওদলাবাড়ি, ডামডিম স্টেশন এবংউচ্ছললিস, ঘিস, চেল প্রভৃতি পাহাড়ি নদী পেরিয়ে ট্রেন থেমেছে নিউ মাল জংশনে। কামরা অনেকটা খালি হলো। কথা ঘোরাতে দিব্যেন্দু বলে,
― সিঙ্গারা খাবে?
― না, তুমি খেতে পারো।
― না, ঠিক আছে।
― প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলে?
― না না, এড়িয়ে যাওয়ার কী আছে?
― রবি ঠাকুরের 'হঠাৎ দেখা' -য় তবু একটা উত্তর ছিল। "রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।" কিন্তু আমি তোমার মনে না রাখা এক অনামি তারা। "মেঘে ঢাকা তারা।" উত্তর দেওয়ার কেউ নেই!
― উঁহু, ঠিক বললে না। মনে থাকবে না কেন? তবে হ্যাঁ, আমাদেরও এই লৌহপথগামিনী শকটে হঠাৎ দেখা হলো!
― লৌহপথগা... বাব্বাঃ, এত কঠিন বাংলা! এর মানে...
― রেলগাড়ি।
চন্দ্রানী খিলখিল করে হেসে ওঠে। আজ এই প্রথম তাকে প্রাণ খুলে হাসতে দেখা গেলো। সেই হাসির যাদুতে দিব্যেন্দুর বুকে চেপে বসা জগদ্দল পাথরটা যেন এক লহমায় সরে গেলো। অনেকটা হালকা বোধ হচ্ছে এখন। দিব্যেন্দু জানালার বাইরে তাকিয়ে ভাবে, সেই চনমনে চঞ্চল মেয়েটি আজ যেন বড়ই শান্ত। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে চন্দ্রানী মাথা নেড়ে বলে,
― তুমি এরকম লাজুক না হলে আমাদের দু'টো জীবন অন্যরকম হতো।
― এভাবে বলছো কেন? মাত্র তিন দিন আমাদের দেখা আর কথা হয়েছিল।
― (বিদ্রুপের হাসি মেখে) দেখা! হ্যাঁ, তুমি শুধুই চোখের দেখা দেখেছিলে। আর আমি দেখেছিলাম দেখার চোখ দিয়ে। তবু অবহেলায় না ফোটা কুঁড়ির মত ঝরে পড়েছি ধুলোয়।
― তুমি অবশ্য আগেও সুন্দর গুছিয়ে কথা বলতে।
― তাই? তোমার মনে আছে সেসব?
চন্দ্রানী জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে। গাছ, গরু, ছাগল মানুষেরা সব একে একে দূরে সরে যাচ্ছে। সেই পুরোন দিনের কথা, দিব্যেন্দুর জন্য প্রতীক্ষার দিন গুনে যাওয়া তার মনটাকে তোলপাড় করে তোলে। আর দিব্যেন্দু সেই পুরোন দিনের স্মৃতির জাল হাতড়ে বেড়ায়। সত্যিই সেদিন সেভাবে ভাবেনি সে। তখন সদ্য কলকাতার আশুতোষ কলেজে সায়েন্স নিয়ে ভর্তি হয়েছে। শিলিগুড়ির বাড়িতে এসেছে গরমের ছুটি কাটাতে। কলকাতায় ফেরার আগের দিন তার দাদার বন্ধু রঞ্জনদা তার স্ত্রী আর শ্যালিকা চন্দ্রানীকে নিয়ে হাজির। আকাশি রঙের স্কার্ট পরেছে। দু'টো বিনুনিতে তার গোছা চুল বিভক্ত। অসাধারণ ভাবে সাধারণ সাজ। তবে বেশ ছটফটে মনে হলো। আকর্ষণ করার ক্ষমতা রয়েছে। রঞ্জনদার শ্বশুরমশাই প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদে পোস্টেড ছিলেন শিলিগুড়িতে। একসাথে লাঞ্চ সারা হলো। অনেক গল্প শেষে বিকেলে চা― পর্বের পর রঞ্জনদা শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য তৈরি। হঠাৎ চন্দ্রানীর পীড়াপীড়িতে তার বাবার কোয়ার্টারে দিব্যেন্দুকে যেতেই হলো। প্রচুর মিষ্টি আর স্ন্যাক্স প্লেটে সাজানো দিব্যেন্দুর সামনে। মিষ্টিতে তার অভক্তি। চন্দ্রানী তার সঙ্গে এঁটুলীর মতো লেগে রইলো। কলকল করে কত কথা বলে গেলো মহানন্দার স্রোতের মত। স্বল্পভাষী দিব্যেন্দু 'হুঁ', 'হ্যাঁ' বলে কাটিয়ে দেয়। পরের দিন দিব্যেন্দু দার্জিলিং মেইলে ফিরবে শুনে চন্দ্রানীর চোখে আনন্দের বিদ্যুৎ রেখা খেলে যায়। কারণ, একই ট্রেনে তাদেরও কলকাতার টিকিট কাটা! ফেরার সময় চন্দ্রানী তাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে হঠাৎ একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিল,
― তুমি গান জানো?
― নাঃ!
― তুমি সত্যিটা বলছো না। তোমাকে দেখলেই বোঝা যায় যে তুমি একজন ভালো গায়ক।
দিব্যেন্দুর কথা চন্দ্রানী সেদিন বিশ্বাস করে নি। পরের দিন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে মিলিত হয় তারা। ট্রেন ছাড়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত চন্দ্রানী দিব্যেন্দুর নন― এসি কামড়ার জানালায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। বারবার বলেছিল, শেয়ালদায় নেমে দেখা না করে যেন সে না বেরোয়। সকালে পৌঁছে দিব্যেন্দু প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলো। দেখা হতেই কথার যেন শেষ নেই চন্দ্রানীর। যেন তাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো না। দিদি জামাইবাবু তাড়া দিতে থাকে। সেদিকে তার ভ্রূক্ষেপ নেই। সে দিব্যেন্দুর কাছ থেকে কথা আদায় করে নেয় যে, তার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের হস্টেলে সে দেখা করতে যাবে। কিন্তু দিব্যেন্দু ভীষণ লাজুক ছিল বলে মেয়েদের হস্টেলে গিয়ে দেখা করতে যাওয়ার ক্ষমতা হয় নি। তবে মনের খাঁচায় একটা অপরাধবোধ যেন ঘিরে রেখেছিলো বেশ কিছুদিন। তারপর জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লড়াই সামলাতে গিয়ে ধীরে ধীরে চন্দ্রানী আবছা হতে হতে নদীর স্রোতের মতো দূর থেকে আরো দূরে বিলীন হয়ে যায়।
― কি ভাবছো?
হঠাৎ প্রশ্নে দিব্যেন্দু সম্বিৎ ফিরে পায়। বলে,
― না, তেমন কিছু নয়।
― এত করে অনুরোধ করার পরেও কেন আমার সাথে দেখা করতে যেতে পারলে না?
― আসলে আমি ঠিক বুঝতে পারি নি যে,
― বুঝতে পারো নি যে, প্রথম দেখায় কারোর মনে এমন গভীর ভালোবাসা জন্মাতে পারে। তাই না? কি করবো বলো? ভীষণ ভালো লেগেছিল তোমায়। বিশ্বাস করেছিলাম খুব। তখন যদি এখনকার মত মোবাইল ফোন থাকতো, তাহলে কিন্তু তোমাকে পালিয়ে যেতে দিতাম না।
― আসলে বিষয়টা এত গভীর ভাবে ভাবার অবকাশ ছিল না। ভবিষ্যৎ তৈরি করাটাই ছিল আমার প্রধান লক্ষ্য।
― কেন, ভালোবাসলে কি ভবিষ্যৎ তৈরি করা যায় না? আমি যে আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি করে নিয়েছিলাম! সেই স্বপ্ন তুমিই ভেঙ্গে দিয়েছো। তবু সেই ভাঙ্গা স্বপ্ন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারি নি। যাকগে, থাক এসব কথা। আজ তোমার দেখা পাওয়াটাই আমার কাছে এক বড় পুরস্কার। আমার এতদিনের উত্তর না পাওয়া প্রশ্নের মুক্তি হলো আজ। আর হয়তো দেখা হবে না কোনদিন! এই দেখো, কথা বলতে বলতে বানারহাট, জলঢাকা ব্রীজ, দলগাঁও স্টেশনও পেরিয়ে এলাম। এরপর মুজনাই স্টেশন, তারপর তোর্ষা নদীর পরেই হাসিমারায় আমার নামার পালা। ভালো থেকো।
― দাঁড়াও, তোমাকে একটা উপহার দেবো। নেবে
তো?
― উপহার?
― হ্যাঁ। আশা করি খারাপ লাগবে না।
― তুমি কিছু দিলে আমি নেবো না, তা কি হয়?
দিব্যেন্দু তার ব্যাগ থেকে একটা বই বের করে লিখে দেয়― চন্দ্রানীকে, সৌজন্যে মৃগাঙ্ক গুপ্ত (দিব্যেন্দু সেন)। তারপর বইটা এগিয়ে দেয়। চন্দ্রানী সেটা হাতে নিয়ে বইয়ের নাম দেখে, 'মিতালী', 'মৃগাঙ্ক গুপ্ত' তারপর মলাট উল্টে টাইটেল পেজে দিব্যেন্দুর কলম দিয়ে লেখাটা পড়ে তার চোখে বিস্ময়ের স্ফুরণ! সে বলে ওঠে
― তুমিই মৃগাঙ্ক...!
― হুঁ, আমার ছদ্মনাম।
― তুমি এত ভালো লেখো! আমার বাড়িতে তোমার বেশ কিছু বই আছে। আমি পড়ি তো! এটা অবশ্য নেই। সাম্প্রতিক প্রকাশিত, তাই না? ছদ্মনামের মত নিজেকে আমার কাছ থেকেও লুকিয়ে রেখেছিলে!
― ছদ্মনামটা বিশেষ কারণে...
― থাক, আর কারণ দর্শাতে হবে না। একটা অনুরোধ করবো? এবার রাখবে তো?
― ঠিক আছে বলো, অবশ্যই রাখবো। তোমার হাসিমারা স্টেশন চলে এলো। তাড়াতাড়ি বলো।
― হুঁ। বলছি, আমাদের নিয়ে একটা গল্প লিখবে?
― উঁ?
― মানে, তোমাকে আর আমাকে নিয়ে গল্প? সত্যি ঘটনাই লিখবে! কি, লিখবে তো?
― আচ্ছা, ঠিক আছে। এবার নিশ্চয়ই কথা রাখবো। আর তুমিও ভালো থেকো। সাবধানে নেমো। অনেক বাজে কথা বলে ফেললাম। কিছু মনে করো না। না না, মনে করার কি আছে। সময়টা খুব সুন্দর কাটালাম!
― তাই? জানি তুমি আমার কেউ না, তবুও কোনো একটা অবয়বে আমার মনের ঘরে তোমার চলাচল অনুভব করি। তুমি অবশ্য এসব বুঝবে না। ঠিক আছে, আসি।
চন্দ্রানীর দু'চোখের কোণে মনে হলো স্ফটিকের বিন্দু গড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায়। মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে সে দরজার দিকে এগোয়। দিব্যেন্দু তার যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে। ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ করে ট্রেন থামে হাসিমারা স্টেশনে। চন্দ্রানী নেমে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ায়। ট্রেন ছাড়লে সে হাত আর মাথা নেড়ে বিদায় জানায়। হ্যাঁ, বিদায়! এবার সেটা নতুন করে, জেনে শুনে আর দায়শূন্য ভাবে। দিব্যেন্দু অবশ্য নতুন একটা গল্প লেখার রসদ পেয়ে গেলো। চন্দ্রানী হয়তো মুক্তি পেলো, কিন্তু সে দিব্যেন্দুকে যেন স্মৃতির খাঁচায় নতুন করে বন্দি করে রেখে গেলো। নাঃ, গল্পটা লিখতেই হবে, চন্দ্রানীর জন্য। তার মনটা বেশ ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। এর থেকে কবে মুক্তি পাবে, কে জানে! রেলগাড়ি ছুটে চলে তার গন্তব্যে, নিয়ম মেনে।
Comments
Post a Comment