সুপ্রভাত মেট্যা | গুচ্ছকবিতা ৩
(১)
মৌসুমী লেবুর অসুখ
তোমার অন্ধকার থেকে আলোর পরিবর্তন আনতে গিয়ে অঙ্ক ভুল হয়ে যায় আমার। টাকা খেতে খেতে খাঁটি দুধ ও ডাবজল খাওয়ার কথাও ভুলে গেছ তুমি।
তোমার আনন্দমুখ আমার অন্ধকার ঘনিয়ে আনে।
বাগানে বনঝাপসা অন্ধকারে হাত বুলিয়ে দেখি, মৌসুমী লেবুর অসুখ তোমার ঝুলে আছে গাছে। রসে টইটুম্বুর বর্ষা শরীর থেকে শ্রাবণ ঝরে পড়ছে তোমার।
অথচ, আমি নৌকা হতে পারলাম না আজও।
নদীর স্রোতে ঢেউ লাগা কবিতার প্লাবন হতে পারলাম না।
প্রতি বয়স তাই আলোর দিন গুনে চলেছি, কবে আসবে ধানের শ্রীমুখ তোমার, রৌদ্রধুলায় মাখা হলুদ বিকেলের ছবি,
অমনি আমি প্রেমার্থের হয়ে যাই।
(২)
জ্যামিতিক নদী
তোমার গল্পের দিকে না তাকিয়েই বলছি
উপন্যাসিকার বুকের গভীরতা কতটা উত্তাল ছিল।
যুবতী তালগাছের রসালো আদিমতা কতটা স্নানের ছিল ভোর।
বিলেতি সন্ধ্যায় সহাস্যে হাতিয়ে দেখেছি
তোমার শরীর ও মনের গুহায়
কতটা অন্ধকার লুকিয়ে রেখেছিলে বলে তুমি,
মিলনসংখ্যা এতটা আধিক্যের,
শ্রাবণ তুঙ্গের হয়ে আছে এখনও।
শুধু মাঝেমাঝে সংসারের বিবাদ এসে বিয়োগের ফলন
ঘটিয়ে ব্যবধান যুক্ত করে,কেন যে আমাদের!
তোমার ফাটল হৃদয়ের নালা বেয়ে তখন জ্যামিতিক নদী
জটিল দুঃখ নিয়ে ভাসে যায়....
(৩)
সুখী বউ: দাদাঠাকুরের ইচ্ছে
সকালে সমুদ্রস্নান সেরে উঠলে আকাশ,
সূর্যোদয়ের ফালি ফালি গ্রাম, সোনার ফসলমেয়েয় ভরে আছে।
ধুলোর পাতালেখায় ফুটে উঠছে আলো, প্রাচীন সৌন্দর্যকে তাক লাগিয়ে। তারপর বড় হয় সময়, একসময়। বয়সের আনন্দে ছেয়ে যায় নিজস্ব পৃথিবী। মেঘেরা কথা বললে মেয়েরা বৃষ্টি হয় তখন।
অন্ধকারে, গুরু গুরু গোপন গর্জনে বেজে ওঠে শরীর।
তবে যে আহাররহিত তুমি, শূন্য হয়ে পড়ে আছ?
শব্দহীন, ছন্দহীন, জীবনের ভুল হয়ে আছ প্রাণে?
দানাহীন দুপুরের রোদে তোমার দাউ দাউ উদরের আগুন এখন আমি কীভাবে নেভাই? কীকরে, কাকে গিয়ে বলি?
হাসিখুশি তবু ফেনা ভাতে ক্ষুধাকে আড়ালে রেখে তুমি কোমল জ্যোৎস্না হতে চাইছ? আহা মেয়ে! কী ত্যাগ তোমার অপূর্ব আশ্চর্য প্রহরীর।
আমি শুধু দুধবিকেলে বাড়ি ফিরি, তোমার থাকার থেকে কয়েক হাত দূরে এক-পা এক-পা করে এগিয়ে আসি, তাকিয়ে দেখি, তোমার বসন্ত মুখ ক্লান্ত, দাদাঠাকুরে ইচ্ছেয় কীভাবে সংসারের সুখী বউ হয়ে আছে!
(৪)
জোনাকী মন্থর
কথা লেখা হয়ে ফুটে উঠছে।
বই-সকাল-ভারে বিকেলবেলা ঢেউ তুলছে আলোয়।
নীরবতা, ধুলোর উড়ে যাওয়া পাখি-ঝাঁকের গল্প করছে, মৃদু।
অল্প বয়সী মেয়ে, পায়ে তার পাতার নূপুর,
বাক্যহীন, দুঃখ ভেজা আলোর পথ পেরিয়ে, এই মাঠ পেরিয়ে
ধূ-ধূ প্রান্তর চোখ, ঝড়ো হাওয়ার সুখ নিয়ে
যেন সে ধূসর শূন্যতায় মিশে যাচ্ছে ধীরে।
দূরে অন্ধকার বানিয়ে, হাতে তুলে ধরিয়ে দিচ্ছে সময়।
ভয় আর আশঙ্কার হাওয়া বয়ে চলেছে জোর।
তবু প্রাণ, জীবন-নিশ্চিহ্ন জগতের রাত হয়ে,
অতীতের হ্যারিকেন লণ্ঠনের আলোয়
প্রদীপন শিখায়, জোনাকী মন্থর যেন দৃশ্য হয়ে আছে!
(৫)
দুষ্ট বুদ্ধি
তোমার কাঁচা বয়সে
পাকা ফল ধরানোর দুষ্ট বুদ্ধি
একদম মন থেকে হটাও, বলছি।
নইলে, মন্দের এতো ঘনঘটায়
সে আনন্দ অন্ধকারেই ঘনিষ্ঠ, ঘর্ষণ সদৃশ হয়ে,
চমকিত বিদ্যুৎ প্রবাহের আভায়
জলসরবরাহের হয়ে উঠবে।
আর শুধু শুধু, না-লাগা ভালোয় কাটাতে
গিয়ে, আমার সমস্ত অপরাধ মনখারাপের উপর
চন্দ্রলেখিকার কলঙ্ক তুলিয়ে
কলম ভাঙতে চাইবে আমার!
জানোতো, হাওয়া হতে গেলে
একটা ফুঁ, কিংবা স্রেফ একটা মুহূর্তই যথেষ্ট!
বাহ, সব লেখাগুলি ভালো লাগলো।
ReplyDelete