সম্পাদকীয় | ঋষভ চক্রবর্ত্তী
মাত্র উনিশ বছর বয়স থাকতেই আমি প্রথম 'তমোহন' -এর সম্পাদনা শুরু করি। বড্ড ভয় হয়েছিল সেই সময়। আদৌ কি পারবো আমি? তবুও তখন লক্ষ একটাই ছিল― উত্তরবঙ্গের ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে লিপিবদ্ধ করা এবং আরও বৃহৎ-সংখ্যক মানুষদের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া। উত্তরবঙ্গ আমার কাছে বরাবরই প্রাণের স্পন্দন। 'তমোহন' -এর সূচনাপর্বে আমি আনন্দ চন্দ্র কলেজে বাংলা সাম্মানিকের তৃতীয় বর্ষে পড়তাম। সেই সময় আমার বাংলা বিভাগের প্রধান ডঃ প্রসাদ রায় আমার মুখে 'তমোহন' সম্পাদনার কথা শুনে বড্ড সাহস জুগিয়েছিলেন। একই সাথে পাশে পেয়েছিলাম বহু বহু মানুষদের। সেই ঋণ আমি কখনও শোধ করে উঠতে পারবো না।
মূলত 'তমোহন' -এর প্রথম সংখ্যাটিতে আমার প্রাণের শহর 'ময়নাগুড়ি' -র ইতিহাসকে খুঁড়ে বের করার চেষ্টা করেছিলাম। অদ্ভুত বিষয় সেই বছরই আনুষ্ঠানিক প্রকাশের প্রায় তিন দিনের মধ্যেই একশো কপি বই বিক্রি হয়েছিল। তারপর অবশ্য পরবর্তীতে আমাদের আরও পঞ্চাশ কপি রি-প্রিন্ট করাতে হয়েছিল। এটা আমাদের কাছে কল্পনাতীত ছিল। তবে এই 'তমোহন' -এর সূচনার পেছনে লুকিয়ে ছিল বিশেষ একটি কারণ। সেই কারণটি ছিল একটি প্রশ্ন! যে ময়নাগুড়ি থেকে কোনও পত্রিকার পুজোসংখ্যা বেরোচ্ছে কি? ময়নাগুড়ি থেকে কি আদৌ কোনও গবেষণাধর্মী পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে? ময়নাগুড়ির ইতিহাস কি লিপিবদ্ধ রয়েছে? উত্তর সহজ। দেখলাম সেই অর্থে একদমই না তো! ঠিক তখনই মাথায় একটি চিন্তা এসেছিল, যে আমরাই কি একটা পত্রিকা প্রকাশ করতে পারি না? ফলে সমগ্র জলপাইগুড়ি জেলার পরিচিত বেশ কিছু প্রবীণ, নবীন ও তরুণ সদস্যদের পরামর্শে তৈরি হয়েছিল 'তমোহন'। এই পত্রিকার সকল সদস্যই বর্তমানে পড়াশুনো অথবা বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত থাকায়, মাসিক কিংবা ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না; সত্যি বলতে ষান্মাসিকও সম্ভব নয়। তাই বার্ষিক পত্রিকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
আমি বর্তমানে কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, বেনারসে বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র। প্রবাসে থেকেই তমোহন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। স্নাতকোত্তরের পড়াশুনো ও বেশ কিছু গবেষণামূলক লেখালিখির কাজ সামলেও, সকল ব্যস্ততার মাঝেও স্পর্ধার সাথে 'তমোহন' -এর দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে। স্থানীয় ইতিহাস ও ঐতিহ্য লিপিবদ্ধ করে শুরু হওয়া তমোহন আজ সমগ্র জেলা ও উত্তরবঙ্গের নানাবিধ অনুসঙ্গ নিয়ে কাজ করে চলেছে। এই কাজ এবারে শুধুমাত্র বার্ষিক পত্রিকা হিসেবেই থাকছে না, কারণ আমরা তমোহনের একটি ডিজিটাল সংস্করণ তৈরি করেছি। ফলে আমরা আমরা চাই সমগ্ৰ বছর জুড়েই সমগ্র উত্তরবঙ্গের সমস্ত অনুসঙ্গ, লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি সর্বাত্মক হোক্। মাভৈ...
সম্পাদক
ঋষভ চক্রবর্ত্তী
২৩.০৭.২০২৫
Comments
Post a Comment